নীল কাগজে সই নিয়ে অবাধ মেলামেশা, বাচ্চা জন্মের পর অস্বীকার

বেশ ভালোই চলছিল মিলির (ছদ্মনাম) চাকরি। উপার্জনের টাকায় মা আর ছেলেকে নিয়ে নিজের মতো করে কাটাচ্ছিলেন দিন। বছর তিনেক আগে তার সুখের সংসারে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান রাজু। কারণে-অকারণে করেছেন দেখা। গিয়েছেন কর্মস্থলেও। খারাপ প্রস্তাবও দিয়েছেন এ যুবক।

এত কিছুর পরও মেয়েটি রাজি না হওয়ায় মিথ্যা বিয়ের ফাঁদ পাতেন রাজু। নীল কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে গড়ে তোলেন শারীরিক সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। তবে মেয়েটি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হতেই সবকিছু অস্বীকার করেন প্রতারক রাজু।

সবকিছু অস্বীকার করলেও বাবাহারা মেয়েটির কোলে এখন দুই মাসের সন্তান। নিজেও অসুস্থ। বিচার চেয়ে কোলের সন্তান নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। আদালতে মামলা করায় প্রতিনিয়ত তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দেন রাজু। মেয়েটি অসুস্থ বাচ্চাকে হাসপাতালের বেডে রেখে যাকে পাচ্ছেন তারই পায়ে ধরে শুধু বিচার দাবি করছেন। বাঁচার জন্য কিছু একটা করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। অন্যথায় শিশুসহ মৃত্যু ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন এ তরুণী।

ভুক্তভোগী তরুণীর বাড়ি মেহেরপুর সদর উপজেলার ইসলামনগর গ্রামে। তার নানাবাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রাকড়া গ্রামে। অভিযুক্ত রাজু কালীগঞ্জ শহরের ফয়লা এলাকার নূর ইসলামের ছেলে।

ভুক্তভোগী তরুণী জানান, তার বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবার সঙ্গে মায়ের বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। সেই থেকে মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে থাকেন তিনি। যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করেন তখন নানা-মামারা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যশোর জেলার খাজুরা এলাকায় রাসেল হোসেন নামের এক ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। তাকে সংসারের বোঝা মনে করে বিয়ে দিয়ে অন্যের বাড়ি পাঠিয়ে দেন নানা-মামা।

সেই সংসারে রাফিন হোসেন নামের একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়ার পর তাকে তাড়িয়ে দেন স্বামী। মাত্র দুই বছর সেখানে সংসার করেন। এরপর ফিরে আসেন মায়ের কাছে। তার সেই ছেলেটির এখন বয়স পাঁচ বছর।

তরুণী আরো জানান, স্বামীর সংসার করতে না পেরে কালীগঞ্জ শহরের শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নেন তিনি। এখানে কাজ করতেন আর বাচ্চাটা বড় করে তুলছিলেন। মায়ের সঙ্গে থেকে ভালোই চলছিল তার সংসার। এমন সময় তার পিছু নেন রাজু। মাঝে মধ্যে তার কর্মস্থলে গিয়ে নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করতেন। এক সময় তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তবে রাজি হননি তিনি।

২০১৯ সালের প্রথম থেকেই তাকে এভাবে জ্বালাতে থাকেন রাজু। এক সময় রাজুকে সাবধান করেন তার কর্মস্থলের মালিক। এতেও কোনো কাজ না হলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তরুণী। রাজু বিয়েতে রাজি হয়ে তাকে একই বছরের ২ মে ফয়লা এলাকার একটি কাজি অফিসে নেন। সেখানে একটি নীল কাগজে স্বাক্ষর নেন। রাজু নিজেও সেই কাগজে স্বাক্ষর করেন। এরপর তারা শহরের ঢাকাল পাড়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন। সেখানে তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো থাকতেন।

মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরা বিচারপ্রত্যাশী এ তরুণী জানান, অন্তঃসত্ত্বার তিন মাসের সময় রাজুকে বিষয়টি জানান তিনি। এরপর তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন রাজু। এমনকি তাদের কোনো বিয়ে হয়নি বলেও দাবি করেন। অস্বীকার করেন তার গর্ভের বাচ্চাকেও।

এরপর কাজি অফিসে যান এ তরুণী। বিয়ের কাবিন দেখতে চাইলে কাজিও বলেন বিয়েটা মুখে মুখে হয়েছে, তাদের কোনো কাবিন হয়নি। এ কথা বলার পর তিনি ২০২১ সালের ২০ মে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। মামলাটি এখনো চলমান। কিন্তু মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছেন রাজু ও তার লোকজন।

তরুণীর মা জানান, এ বিয়ে তিনি দিতে চাননি। রাজু জোর করে বিয়ে করেছেন। বিয়ের সময় তিনি নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যেন বিয়েটা ভেঙে যায়। তাও সে কারো কথা না শুনে বিয়ে করল। এখন মেয়েটাকে রাস্তায় ভাষিয়ে দিল। তিনি এর বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে রাজু জানান, তিনি বিয়ে করেছেন সঠিক। ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাঝে মধ্যে সমস্যা হয়েছে কিন্তু ছেড়ে দেননি। তাহলে কেন মামলা করলেন। এ মামলা করার কারণে তিনি সবকিছু অস্বীকার করছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জীবন কুমার জানান, মামলাটি তিনি তদন্ত করছেন। ধর্ষণ ও ধর্ষণের সহায়তা করার অভিযোগে তিনি মামলা করেছেন।

সূত্র:ডেইলি বাংলাদেশ

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)