উপকূলে লবনাক্ততায় কৃষিতে বছরে ক্ষতি সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা-সাতক্ষীরায় সেমিনারে বক্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক
এক দশকের ব্যবধানে উপকূলীয় অঞ্চলের জমিতে লবনাক্ততার মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি লবনাক্ত জমির পরিমানও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষি ও আর্থসামাজিক নানান ক্ষেত্রে। ফলে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শুধু লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারনেই উপকূলের কৃষিতে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠতি ‘উপকূলীয় কৃষি জমিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম (বিএজেএফ) ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসিবে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
সেমিনারে ম–ল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরামের (বিএজেএফ) সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার উপ নগর সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহীন বলেন, ১৯৭৩ সালে উপকূলীয় জেলাগুলোতে লবনাক্ত জমির পরিমান ছিলো ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর এখন তা ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে হালকা লবনাক্ততা জমির পরিমান ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর, মধ্যম মাত্রায় লবনাক্ত জমির পরিমান ২ লাখ ৫০ হাজার, তীব্র মাত্রায় ৪ লাখ ২০ হাজার এবং খুব তীব্র মাত্রায় লবনাক্ত জমির পরিমান ২ লাখ হেক্টর। লবনাক্ততার কারনে আবাদি জমি যেমন অনাবাদি হচ্ছে তেমনি উপকূলে অর্থনৈতিক ক্ষত বাড়ছে। উপকূলীয় জেলাতে খাদ্য শস্য উত্পাদন বঞ্চিত হচ্ছে ৩০ লাখ টনের বেশি। কৃষি উত্পাদন কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
সমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেষ্ট্য প্রতিবেদক মো. মানিক হোসেন (মানিক মুনতাসির) এবং ৭১ টেলিভিশনের জেষ্ট্য প্রতিবেদক কাবেরী মৈত্রেয়। বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী ও সাধরণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, স্থানীয় দক্ষিণের মশাল পত্রিকার সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী এবং সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ। সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতায় ছিলো এনআরবিসি ব্যাংক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, কৃষি জমিতে জোর করে লবন প্রবেশ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাধ প–র্ণ:নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকটি পোল্ডারে করা গেলে স্থায়ীভাবে লবনাক্ত পানি প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হবে। তাহলে জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি লবনাক্ত সহিষ্ণু শস্য আবাদের উদ্যোগ নেওয়া গেলে স্থানীয় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে। গাবুরা অঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। এছাড়া চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে আরো প্রযুক্তি সহায়তা বাড়ানো দরকার। নিরাপদ ও উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে ভেনামি চিংড়ির চাষ প্রচলন করা যেতে পারে।
স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, উপকূলীয় অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা অঞ্চল সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। আবার বেড়িবাধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি চাষ করা যাবে না সেটি পরিপালন হচ্ছে না। সম্প্রতি আম্ফানের কারনে বেশ কিছু অঞ্চলের গাছ পালা মারা যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে জলবায়ুর ঝুকি মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহনের দাবি জানান তারা।