নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল টাইগাররা
স্পোর্টস ডেস্কঃ
ঘরের মাঠে অপরাজিত হয়ে ওঠা নিউজিল্যান্ডের কাছে যেন পাত্তাই পাচ্ছিল না কোনো দল। টানা ১১ বছর উপমহাদেশের কোনো দল তাদের হারাতে পারেনি ঘরের মাঠে। সেখানে বাংলাদেশ তো কিছুই না! এই ধারাটাই উল্টে দিল টাইগাররা। কোটি বাংলাদেশির কাছে এই ম্যাচটা যে স্বপ্ন সত্যি হবার ম্যাচ। এই সাঁঝ সকালে চোখ কচলাতে কচলাতে অনেকে হয়তো বারবার যাচাই করতে চাইবে, ভুল দেখছি না তো!
না, ভুল নয়। নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক এক জয় পেল বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবার হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলার বাঘেরা। এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৯টি টেস্টসহ তিন ফরম্যাটে মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে একটিও জয় না পাওয়া বাংলাদেশ অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কিউইদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা।
কিউইদের মাটিতে এর আগে কোনো ফরম্যাটেই জিতেনি টাইগার বাহিনী। সেই গেরো কাটল ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ দিয়েই, তাও আবার ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৫৮ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ১৬৯ রান করলে জয়ের জন্য ৪০ রানের টার্গেট পায় মুমিনুল হক বাহিনী।
৪০ রানের টার্গেট দুই উইকেট হারিয়ে হেসেখেলে পেরিয়েছে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩ ও মুশফিকুর রহিম ৩ রান করেন। শান্তকে আউট করেন কাইলে জেমিসন। এর আগে ৩ রান করা সাদমান ইসলামকে সাজঘরে পাঠান টিম সাউদি।
টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছে ১৬৯ রানে। স্বাগতিকরা এগিয়ে ছিল ৩৯ রানে। পঞ্চম দিনের শুরুতেই জোড়া উইকেট নেন এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। দিনের শুরুতেই আগের দিনের অপরাজিত থাকা রস টেলরকে সাজঘরে পাঠান টাইগার পেসার এবাদত। এবাদতের বল সরাসরি স্টাম্পে আঘাত হানে টেলরের। ১০৪ বলে তিনি করেন ৪০ রান। এ উইকেটের ফলে ৫ উইকেট পূর্ণ হয় এবাদতের। টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের এটি ৯ বছর পর প্রথম কোনো পাঁচ উইকেট শিকারের ঘটনা। টেলরকে বিদায় করার পর এবাদতের শিকারে পরিণত হন কাইলে জেমিসনও। শরিফুল ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তিনি। নামের পাশে কোনো রানই তুলতে পারেননি জেমিসন।
এরপর তাসকিন আহমেদ তুলে নিলেন রাচীন রবীন্দ্রর উইকেট। রবীন্দ্রর পর তাসকিন নিয়েছেন টিম সাউদির উইকেটও। এদের মধ্যে রবীন্দ্র ১৬ ও সাউদি শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ৮ রান করা বোল্টকে ফেরত পাঠান মিরাজ। বাংলাদেশের হয়ে এ ইনিংসে ৪৬ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নেন এবাদত। তাসকিন নেন ৩ উইকেট।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করে নিউজিল্যান্ড। স্বাগতিকদের হয়ে সেঞ্চুরি করেন ডেভন কনওয়ে। ২২৭ বলে ১২২ রান করে টাইগার দলপতি মুমিনুল হকের শিকার হন তিনি। হেনরি নিকোলস ও উইল ইয়াং পূর্ণ করেন হাফসেঞ্চুরি। নিকোলস ৭৫ ও ইয়াং ৫২ রান করেন। বাকিদের মধ্যে রস টেলর ৩১, টম ব্লান্ডেল ১১ রান করেন। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি করে উইকেট পান শরিফুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। মুমিনুল ২ উইকেট ও এবাদত এক উইকেট পান।
জবাবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৪৫৮ রানে। টাইগারদের হয়ে চারজন ব্যাটারে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে আউট হন। নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৪ রানে ও মাহমুদুল হাসান জয় ৭৮ রানে নিজেদের উইকেট হারান। এরপর মুমিনুল ৮৮ রান করে আউট হন ট্রেন্ট বোল্টের বলে। মিডল অর্ডারে লিটন দাস করেন ৮ রান। শেষ দিকে মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে ৪৭ ও ইয়াসির আলি রাব্বির ব্যাট খেবে ২৬ রান আসে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৪ উইকেট নেন বোল্ট। তিন উইকেট পান নেইল ওয়েগনার।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই জয় অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দলের যে মানসিক অবস্থা, দেশের ক্রিকেটে যে গুমোট আবহাওয়া, সবকিছুর সমাধান মিলেছে ক্রিকেটেই। হয়ত জয়ই এনে দিতে পারে সবকিছুর উত্তম সমাধান।