জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত
রঘুনাথ খাঁ:
জলাবদ্ধতায় সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ বিল ডুবে থাকায় বিপুল জমিতে বোরো আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এনিয়ে সংসার চালানোর শঙ্কায় চাষিরা। অপরদিকে বোরো আবাদের টার্গেট পূরণ না হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে কৃষি কর্মকর্তাদের।
সাতক্ষীরার দেবহাটা,আশাশুনি ও সদর উপজেলার বিভিন্ন সূত্র ও চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এ বছর নবান্নের উৎসবে মেতে উঠতে পারেননি তারা। যে বিলগুলোতে থাকার কথা সোনালী ধানের সমারোহ, সেই বিলগুলো এখনো পানিতে থৈ থৈ করছে। পনি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করেছেন প্রভাবশালী মহল। এতে কপাল পুড়েছে গরীব চাষীদের। আমন ফসল থেকে বি ত হয়েছে হাজার হাজার কৃষক। হেমন্তের এই দিনে যে গ্রামগুলোর উঠোন ভরা থাকতো নতুন ধানের পালায়, সেই উঠোনে এবার এক আঁটি ধানও দেখা যায়নি। নবান্নের দিনে যে কৃষাণী ব্যস্ত থাকতেন ঘর গোছাতে সেই কৃষাণী এবার অলস সময় পার করছেন। কপালে তার চিন্তার ভাজ। বোরো আবাদ নিয়েও কৃষক রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, খাল, বিল ও নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্যবার রবি মৌসুমে ফিংড়ি মাঠে ধান, আলু, কপি, পেঁয়াজ, বেগুন, টমেটো, গম, খেশারীসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করতাম। পানির কারণে এবার কিছুই চাষ করতে পারিনি।
একই এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, জেলার সর্ববৃহৎ বিল দাঁতভাঙ্গা, মালিনি, হাজিখালি, বুড়ামারা, পালিচাঁদ, চেলারবিল, ডাইয়ের বিল, ঘুড্ডির বিল, কচুয়ার বিল, ঢেপুর বিল, লাবসার বিল, বল্লীর বিল ও পদ্মবিলসহ অর্ধশতাধিক বিল এখনও ফসল শূন্য। এসব বিল ও গ্রামের পানি নিষ্কাশনের পথ বেতনা, মরিচ্চাপ ও সীমান্তের ইছামতি নদী। এসব নদী বিল ছাড়া উঁচু হয়ে গেছে। ফলে প্রতি বছর বিলগুলো জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। ফলে আমনের আবাদ হয়নি। পাশাপশি বোরো আবাদও অনিশ্চিত।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় মোট এক লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১৪ হেক্টর জমির মধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮৮ হেক্টর। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে জলাবদ্ধতার কারণে ৫৫ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমিতে এবার বোরো চাষ অনিশ্চিত।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় এবং সবচেয়ে কম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে শ্যামনগর উপজেলায়। বোরো মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ২৩ হাজার ৪১০হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ৪ হাজার ৯১০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ১৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। কলারোয়ায় ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ২হাজার ১৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ১০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। তালায় ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। দেবহাটায় ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ২ হাজার ৮২০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ৩ হাজার ১০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। কালিগঞ্জে ৫হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ১হাজার ১০হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। আশাশুনিতে ৭ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ৪ হাজার হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শ্যামনগর উপজেলায় ১ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ভিতরে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের জন্য ৩৬০ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান চাষের জন্য ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। যথাক্রমে জেলার ৭টি উপজেলার ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের জন্য ৫০৫ হেক্টর জমি বীজতলা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: নুরুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা না থাকলে বোরোর আবাদ আরও বেশি হতো বলে জানান তিনি।