সুন্দরবন পর্যটনকেন্দ্রের প্রয়োজন আধুনিকায়ন
আশিকুজ্জামান লিমনঃ
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন। পূর্ব দিকের অংশটি বরগুনার পাথরঘাটা আর পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলা হয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে গেছে সুন্দরবন। জীববৈচিত্র্যের আধার এ বন। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসভূমি এ সুন্দরবন। প্রকৃতিপ্রেমীসহ বিশ্ববাসীর সুন্দরবন নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। যার ফলে দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে সুন্দরবন। সুন্দরবন হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা উপেক্ষা করে প্রতি বছরই সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান। তবে পর্যটকদের সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা নেই। শুধু যোগাযোগব্যবস্থার দৈন্যদশাই নয়, বিদেশি পর্যটকরা এ দেশে বেড়াতে এসে নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি পদে পদে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকদের জন্য নেই কোনো নিরাপদ আধুনিক নৌযান, পর্যাপ্ত হোটেল, রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা। এমনকি পর্যটকদের সুপেয় পানির ব্যবস্থাও অপ্রতুল। ইংরেজি জানা ও বন সম্পর্কে অভিজ্ঞ গাইডদের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সুন্দরবনে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসার কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি।
সুন্দরবনের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এর উন্নয়ন ও বিকাশে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। সুন্দরবনে ভ্রমণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা, পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, পর্যটন এলাকায় পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের সংস্কার ও উন্নয়ন, পর্যটনকে ব্র্যান্ডিং করা, পর্যটন স্পটে পর্যটকদের জন্য বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা ও পর্যটন মেলার আয়োজন করা, ট্যুরিস্ট জেনারেটিং দেশগুলোয় (যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া) পর্যটন অফিস স্থাপন করা ইত্যাদি পদক্ষেপ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। শীত মৌসুম পর্যটনের ভালো সময়, পর্যাপ্ত থাকার জায়গা, যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা, বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ ও নদী খালে ভ্রমণের জন্য নিরাপদ নৌযানের ব্যবস্থা করতে হবে। পর্যটনকেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ, পর্যটনকেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন, সুন্দরবন তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ, টিকিটঘর, সেন্ট্রি বক্স, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, সুন্দরবনের ডিসপ্লে ম্যাপ ও পর্যটকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণ করতে হবে। নদী-খাল খনন করে লোকালয় থেকে বনকে আলাদা করতে হবে। লোকালয় থেকে বনের প্রবেশপথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চৌকি বা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
Please follow and like us: