আফগানিস্তানে খাবার জোগাতে সন্তান বিক্রি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। আর্থিক সংকট এমন আকার নিয়েছে যে, খাবার কেনার খরচ জোগাতে কন্যাশিশুদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা।

নয় বছরের এক ভুক্তভোগী পারভানা মালিক। বন্ধুদের সাথে খেলতে ভাল লাগলেও, তার সেই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। অভাবের কারণে ৯ বছরের ছোট্ট পারভানাকে বিক্রি করে দিয়েছে তার পরিবার।

যার কাছে পারভানাকে পাত্রী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে তার বয়স ৫৫ বছর। পারভানার ভয়, লোকটি বিয়ের পর তাকে মারধর করবে, জোর করে ঘরের কাজ করাবে। অবশ্য, এছাড়া আর কোন উপায় নেই বলে জানিয়েছেন পারভানার মা-বাবা। কয়েক মাস আগে পারভানার ১২ বছরের বোনকেও বিক্রি করে দেয় তার পরিবার।

শুধু পারভানা নয়, চার বছর ধরে বাস্তুচ্যুতদের শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে এমন অনেক পরিবার। ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো সহায়তা বন্ধ করে দেয়ায় ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান।

দুমুঠো খাবার যোগাতে দিন দিন কন্যাশিশুদের এই বিক্রির হার বেড়েই চলেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে। পরিবারগুলোর দাবি, এছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই তাদের কাছে।

বাদগিসের এক মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ নাঈম নিজাম বলেন, “দিন দিনই এমন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে, যারা সন্তান বিক্রি করে দিচ্ছে। খাবারের অভাবে, কাজের অভাবে পরিবারগুলো এ কাজ করা ছাড়া উপায় নেই বলে বোধ করছে।”

পারভানার বাবা আবদুল মালিক সিএনএন-কে তার সন্তান বিক্রির অবিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তিনি রাতে ঘুমাতে পারেন না। মেয়েকে বিক্রির আগে লজ্জা, অপরাধবোধ আর দুশ্চিন্তায় মন ভেঙে গেছে তার।

মেয়েকে বিক্রি না করার সব চেষ্টাই তিনি করেছেন। কিন্তু অনেক জায়গায় কাজ খুঁজেও পাননি। আত্মীয়স্বজনের কাছে ধার করেছেন। তার স্ত্রী অন্যদের কাছে খাবার ভিক্ষা করেছেন। কিন্তু তাতেও পরিবারের জন্য খাবার জোগাতে হিমশিম খেয়ে তার মনে হয়েছে সন্তান বিক্রি ছাড়া উপায় নেই।

আবদুল মালিক বলেন, “আমাদের পরিবারের সদস্য আটজন। পরিবারের অন্যদের বাঁচাতে হলে (মেয়েকে) বিক্রি করতেই হত।” পারওয়ানকে বিক্রি করে আব্দুল মালিক যে অর্থ পেয়েছেন, তাতে তার পরিবারের চলবে মাত্র কয়েকমাস। এর মধ্যে আব্দুলকে অন্নসংস্থানের অন্য কোনও উপায় বের করতে হবে।

পারভানার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে শিক্ষক হওয়া। সে কখনও তার পড়াশুনা ছাড়তে চায়নি। কিন্তু এই সব স্বপ্ন ভেস্তে দিয়ে গত ২৪ অক্টোবর পারভানার ঘরে তাকে কিনে নিতে আসে কোরবান নামের ওই ‘বুড়ো’ লোক।

ভেড়া, জমি ও অর্থ মিলিয়ে পারভানার বাবাকে দুই লাখ আফগানি মুদ্রা (২,২০০ মার্কিন ডলার) দেন তিনি। তবে পারভানা ক্রয়কে ‘বিয়ে’ বলতে নারাজ কোরবান। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী আছে। সেই পারভানাকে দেখাশোনা করবে। পারভানাকে সে নিজের সন্তানের মতোই দেখবে।”

“পারভানার বাবা গরিব, তার অর্থের প্রয়োজন। সে (পারভানা) আমার বাসায় কাজ করবে। আমরা তাকে পেটাব না। সে আমাদের পরিবারের একজন হয়েই থাকবে।”

পারভানার বাবাও কেঁদে কেঁদে কোরবানকে বলেন, মেয়ের যত্ন নিতে, তাকে না মারতে। সে কথায় সায় দিয়ে পারভানার হাত ধরে ঘরের দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরোন কোরবান। পা সরতে চায় না পারওয়ানের।

তাকে ধীরে ধীরে টেনে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায় কোরবান। আর সেদিকে চেয়ে চোখের পানি ফেলেন বাবা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)