কুমিল্লা ও রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদেসাতক্ষীরায় মানববন্ধন প্রতিবাদ সমাবেশ

রঘুনাথ খাঁ:

কুমিল্লা, নোয়াখালি, চট্ট্রগ্রাম, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্গা প্রতিমা,মন্দির, ইস্কন মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১১টায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাধাশ্যামসুন্দর মন্দিরের (ইস্কন) সাতক্ষীরা শাখা সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসুচি পালন করে। পরে তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

ইস্কন মন্দিরের সাতক্ষীরা শাখার অধ্যক্ষ কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারির সভাপতিত্বে মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি বিশ্বনাথ ঘোষ, জয়মহাপ্রভু সেবক সংঘের সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি গোষ্ঠ বিহারী মণ্ডল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন,বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: সুশান্ত ঘোষ, আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ সুব্রত কুমার ঘোষ, বিকাশ দাস, পলাশ দেবনাথ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, দুর্গাপুজা চলাকালিন মহাষ্টমীর দিনে কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির পাড় মন্দিরের দুর্গা প্রতিমার পাশে থাকা মাটির তৈরি হনুমানের উরুর উপরে পরিকল্পিতভাবে রেখে দেওয়া একটি কোরআনকে নিয়ে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালি, ফেনী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দির, প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নোয়াখালির বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহুনীতে নবমীর দিন আটটি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর ছাড়াও সেখানকার ইস্কন মন্দিরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। সেখানে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার যতন সাহা নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে হামলাকারিরা। একইভাবে হামলায় নিহত প্রান্ত দাস নামের একজনের লাশ ইস্কন মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিজয়া দশমীর দিন শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর চট্টগ্রামে মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। অষ্টমীর দিন কুমিল্লায় মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুরের পর ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করার পরও আজো ভাঙচুর , লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা অব্যহত। সর্বশেষ রবিবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জ মালোপাড়ায় উগ্র মুসলিম মৌলবাদিদের দেওয়া আগুনে ৫০টির বেশি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি,মন্দির পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। এসব পরিবারের নারী , পুরুষ ও শিশুদের আহাজারিতে ভারী হয়ে গেছে বাতাস। এ ছাড়া গত ৭ আগষ্ট খুলনার রুপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে ১১টি মন্দির, ৫০টি প্রতিমা, দু’টি হিন্দু বাড়ি ও সাতটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হলেও কয়েকজন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা উচ্চ আদালত তেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ায়র পর নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে। একের পর এক ঘটনা ঘটে যাওয়ায় প্রশাসন ও সরকারের উপর আস্তা হারাচ্ছে মানুষ।

বক্তারা আরো বলেন, ২০১২ সালের ২৭ মার্চ দৃষ্টিপাত পত্রিকায় প্রকাশিত মহানবীকে কটুক্তি সংক্রান্ত একটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ফতেপুর ও চাকদাহ গ্রামের ১২টি হিন্দু পরিবারসহ ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও াগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত চারটি মামলার মধ্যে একটির বিচার আলোর মুখ দেখেনি। রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট হলেও সাত বছর পর আবার মামলা পূণঃতদন্তে যাওয়ায় আসামীরা শাস্তি পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আশাশুনির প্রতাপনগর, দেবহাটার টিকেট, সদরের বাবুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা, হিন্দুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর, হিন্দুদের হিন্দুদের জমিজবরদখল ও হামলার ঘটনায় একটির শাস্তি হলে চলতি দুর্গাপুজা চলাকালিন সময় থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্রমৌলবাদিরা এত অত্যাচার করতে পারতো না। লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে বাধা দেওয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষকে পিটিয়ে জখম ও কমপক্ষে পাঁচজনকে হত্যা ও তিন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বক্তারা আরো বলেন, সর্বশেষ রবিবার রাতে রংপুর জেলার পীরগঞ্জের মালে াপাড়ায় ৫০টির বেশি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকার ও পুলিশ সজাগ থাকার পরও একের পর এক হামলা ও অগ্নিসংযোগ অব্যহত আছে। অবিলম্বে সংখ্যালঘু ট্রাইব্যুনাল গঠণ করে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এসবের সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইতিপূর্বে পরিকল্পিতভাবে ঘটানো মন্দির , প্রতিমা ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার বিচার হলে নতুন করে এসব ঘটনা ঘটতো না বলে দাবি করেন তারা।

পরে তারা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্বারকলিপি পেশ করা হয়।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)