আশাশুনিতে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে ধর্মঘট
একই উপজেলার প্রতাপনগর গ্রামের মাহমুদুল হাসান (৩৫)। গেল জুলাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসা হয় দাফনের জন্য। পূর্নিমার ভরা জোয়ারে চারিদিকে থইথই পানি। মাটির উপর কোন রকম পলিথিন বিছিয়ে ইট গেথে সমাধি তৈরি করে দাফন করা হয় মৃতদেহ। কয়েকদিন পর লাশ পচে চারিদিকে দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পানি দূর্ষিত হয়ে যায়। এমন চিত্র বিগত কয়েক বছর ধরে চলছে উপকূলীয় বানভাসি জনপদে। মুসলমানদের চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে সামাধি করে দাফন করা হচ্ছে।
দীর্ঘ দেড় বছরের অধিক সময় সাতক্ষীরা উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা লবণ পানিতে ডুবে আছে। জলাবদ্ধতা এবং করোনা এই অঞ্চলের মানুষকে দুর্বিষহ অবস্থায় ফেলেছে। মানুষের জীবনযাত্রা জোয়ার-ভাটা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের আতঙ্কে স্থানীয়দের তটস্থ থাকতে হয় সবসময়। অনেক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, স্যানিটেশন, সুপেয় পানিসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্ত উপকূলের লক্ষাধিক মানুষ।
আজ শক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টায়
জলাবন্ধতা নিরসনে দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মান, সুপেয় পানি ও উপকূল সুরক্ষার দাবিতে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগরে ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পরিবেশবাদী আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর আহ্বানে এই ধর্মঘটে উপকূলের ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।
ধর্মঘটে অংশ নেওয়াদের একজন স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘর-দোর, জাগা-জমি, সব শেষ। ভাসি-বুড়ি আশ্রয় নিছি একটা দোকান ঘরে। আমরা ভাটির সময় জাগি, আবার জোয়ার হলি ডুবি। এভাবে আর কত দিন থাকপো। বউ-বাচ্চানে আর পাত্তিছিনি। এবার ভাবিছি চুলি যাবো নড়াইলি। বাপ দাদার ভিটি-মাটি সব গেছে। দু’বছর হতি যাচ্ছে ডুবি মরতিছি। বাঁধ হবার নাম নেই। বাঁধ টাধ হলি আবার আসব।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়ক এস এম শাহিন আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে আজ উপকূল ক্ষতবিক্ষত। মানুষের বেঁচে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ। মানুষ উপকূল ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আগামী জলবায়ু সম্মেলনে আমরা কথার বাস্তবায়ন দেখতে চাই, ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চাই।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় গোটা সাতক্ষীরা উপকূল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘর-বাড়ি ধসে পড়ে দুই হাজারেরও বেশি। এখনো ডুবে আছে শতাধিক ঘর-বাড়ি। কাজ না থাকায় সেখানকার লোকজন বর্তমানে বেকার। উপকূলীয় এলাকায় বাস্তুচ্যুত হয়ে আছে হাজারো পরিবার। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।