কলারোয়ায় ইউপি নির্বাচনে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কার
ডেস্ক রিপোর্ট:
সাতক্ষীরার কলারোয়ার ৫নং কেঁড়াগাছি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইন ও তার কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দুই বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল ও মারুফ হোসেনসহ ৩৮ জনের নামে সোমবার মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে।
আটকরা হলো-বোয়ালিয়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম ওরফে খোকা (৩৫), বদরুর রহমান বাদল (৪৫), শরিফুল ইসলাম (৩২), আরিফুল ইসলাম (৩৭) ও আমিনুর রহমান (৩৬)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর খায়রুল কবির জানান, ‘ওই ঘটনায় সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভুট্টোলাল গাইনের স্ত্রী শ্যামলী রানী গাইন বাদী হয়ে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা (নং-৭) করেছেন। ইতোমধ্যে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
‘নির্বাচনী পরিবেশ ও এলাকায় শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ কঠোর ও সতর্ক রয়েছে’ বলে জানান তিনি।
অপরদিকে, ৬ সেপ্টেম্বর দুই বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেম্বর মারুফ হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাতক্ষীরা জেলা সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নের বোয়ালিয়া উত্তরপাড়া মাদ্রাসা মোড় এলাকায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আ.লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হামলায় নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইনসহ তার ১০/১৫ জন কর্মী-সমর্থক আহত হন।
আহতের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় ওই রাতেই সিরাজুল ও আনেছা খাতুনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইনসহ গুরুতর আহতাবস্থায় অপর ৭ জনকে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
কলারোয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহতরা হলেন-উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের মোছলেউদ্দীন গাইনের ছেলে নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইন (৫৫), কিতাবুদ্দীন গাজীর ছেলে ফারুক গাজী (৫৭), আরিজুল সরদারের ছেলে মন্টু (২৫), আকবার গাইনের ছেলে আব্দুল বারিক (৫০), গোলাম মোস্তফা গাইনের ছেলে ডা. হাবিবুর রহমান (২৬), তবিবর গাজীর স্ত্রী বৃষ্টি (১৮) ও কাকডাঙ্গা গ্রামের মৃত রেজাউল ইসলামের ছেলে সাঈদ হোসেন (৩০)।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের কিতাবুদ্দীন গাজীর ছেলে সিরাজুল গাজী (৪৫) ও শাহাজানের স্ত্রী আনেছা খাতুন (৫৫)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুরের দিকে বোয়ালিয়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেনের মোটরসাইকেল প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে নৌকার কর্মীরা ভাংচুর করে। এ ঘটনার জেরে সন্ধ্যার দিকে মারুফ হোসেনের কর্মীরা পাল্টা কাকডাঙ্গা মোড়ে নৌকার নির্বাচনী কার্যালয় বন্ধ করে দিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পান্টা ধাওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এরই জের ধরে রাত ৯টার দিকে বোয়ালিয়া উত্তরপাড়া মাদ্রাসা মোড়ে আ.লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিল ও আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের মারুফ হোসেন ও তাদের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বোয়ালিয়া গ্রামের ফারুকের বাড়িতে হামলা করে ফারুক, সিরাজুল ও আনেছাকে মারপিট করে আহত করে।
খবর পেয়ে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ভুট্টোলাল গাইন গোয়ালচাতর বাজারে নিবার্চনী প্রচারণা বন্ধ করে দ্রুত ঘটনাস্থলে গেলে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থী ও কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দুই বিদ্রোহী প্রার্থী ও সমর্থকদের হাতে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলালসহ ১৪/১৫ জন কর্মী রক্তাক্ত জখমসহ গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন আহতাবস্থায় তাদের কলারোয়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
রোববার দিবাগত গভীর রাতে কলারোয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম জানান, ‘আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে মহিলাসহ দুইজনকে রেফার করে সাতক্ষীরা সদর হাতপাতালে পাঠানো হয়েছে। সাতজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন জানান, নৌকা প্রতীকের লোকজন আমার নিবার্চনী অফিস ভাংচুর করে এবং আমার লোকজনকে হামলা করে। তাছাড়া আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আফজাল হোসেন হাবিল তার প্রচার শেষ করে ওই মোড়ে আসলে তাকে ও তার লোকজনকে নৌকার প্রার্থীসহ তার কর্মীরা হামলা করে।’ এক প্রশ্নের জবাবে ‘নৌকার প্রার্থী ও তার কর্মীদের আহতের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না’ বলে জানান।
আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী আফজাল হোসেন হাবিলের নিকট মোবাইল ফোনে একাধিকবার রিং করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইন জানান, আমার কর্মী ফারুকের বাড়িতে বিদ্রোহী প্রার্থী হাবিল ও মারুফ ঐক্যবদ্ধ হয়ে হামলা করে। এ সময় আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার মাথায় কোপ ও হাতুড়ি পিটা করে রক্তাক্ত জখম করে। সেসময় আমার কর্মীরা ছুটে আসলে তাদেরকেও মারপিট করে গুরুতর আহত করে।