খুলনা বটিয়াঘাটা হাসপাতালে মানব সেবার প্রতিকৃৎ ডাঃ মিজানুর রহমান
আব্দুর রশিদ বাচ্চু, খুলনা :
বটিয়াঘাটা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্হ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা প্রজাতন্ত্রের একজন সফল মানব সেবার প্রতিকৃৎ ডাঃ মিজানুর রহমান। গত ২০১১ সালের ১৫ মে তারিখ সরকারি চাকুরীতে প্রবেশের পর ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেই অতি অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নেন তিনি। দীর্ঘ ৮ বছরের বেশী সময় তিনি ফুলতলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (হার্ট অ্যাটাক ,স্ট্রোক ,সিভিআর রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম) রোগী হাসপাতালে আসা মাত্রই রেফার করা হতো, সে সকল রোগীগুলো তিনি নিজ দায়ীত্বে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দিতেন । তাছাড়া সকাল,বিকাল, রাতে রুগীর প্রয়োজনে ফোন করলেই ছুটে আসতেন হাসপাতালে। তার মায়াবী ও দরদ মাখা হাসিতেই রোগী অর্ধেক সুস্থ হয়ে যেতেন। বর্তমানে ফুলতলা, অভয়নগর, ডুমুরিয়া ও দিঘলিয়া উপজেলার মানুষের প্রিয় ডাক্তার বনে যান অতি অল্প সময়ে মধ্যে।
গত বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি তার বদলীর খবর পেয়ে হাজার হাজার মানুষ ফেস্টুন প্লাকরড হাতে ছুটে আসেন তার বদলী ঠেকাতে। এমনকি তারা খুলনা -৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বরাবর বদলী বাতিলের আবেদন করেন এবং সব শেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে ডাঃ মিজানের আশ্বাসে আবার ফিরে আসবেন ফুলতলায় এমনি এক প্রতিশ্রুত ব্যাক্ত করেন । পরক্ষণে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেই নিজের ভাবমূর্তি প্রকাশ করতে থাকেন। রুগী দেখা ও দাপ্তরিক কাজের মাধ্যমে এখানেও সকলের আস্থাভাজন হয়ে যান।
করোনা মহামারী বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়লে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল চালু হলে পরিচালক ডাঃ মুন্সী মোঃ রেজা সেকেন্দার, ডাঃ মিজানুর রহমানকে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের সহকারী কো-অরডিনেটর হিসেবে গুরু দায়িত্ব দেন, পাশাপাশি তিনি ২৫ শয্যার করোনা সাস্পেক্টেড ওয়ার্ড তথা ফ্লুকর্নার ও আইসোলেশন ওয়ার্ড এর ফোকাল পার্সন হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেন। করোনা মহামারিতে অন্য ডাক্তারের তুলনায় তিনিই রুগীর সংস্পর্শে বেশি যেতেন। সরাসরি করোনা রুগীর সেবা দানের পাশাপাশি তিনি সেবিকা ও অন্যান্য সাপোর্টিং স্টাফদের করোনা রুগী ম্যানেজমেন্ট এর উপর প্রশিক্ষণও দিতেন।
সরাসরি করোনা রুগীর সেবা প্রদান করতে গিয়ে তিনি ২৬/০৬/২০ তারিখ করোনায় আক্রান্ত হন এবং মাত্র ১১ দিনের মাথায় নিগেটিভ হয়ে ১২তম দিনে কর্মস্থলে যোগ দান করেন। এটা এক বিরল ইতিহাস ও বলা যায়। হাসপাতালের পরিচালক তাকে আবারো সেই গুরু দায়িত্ত্বে বহাল রাখেন। দীর্ঘ ১৩ মাস খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাধারন রুগীর পাশাপাশি করোনা রুগিদের সেবা দানে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
সর্ব শেষ গত ৩১/০৩/২১ তারিখ বটিয়াঘাট স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা হিসেবে বদলীর আদেশ পান। সুত্রে জানাগেছে,এবার তিনি স্বেচ্ছায় বদলী নেন কারণ তিনি ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেতে চান। চলতি বছরের ১লা এপ্রিল তারিখ উপজেলা স্বাস্থ্য ওপঃ পঃ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর তিনি হাসপাতালের উন্নয়নে এবং সেবার মান বাড়াতে চিকিৎসক ,নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় করেন। খুব দ্রুত তিনি হাসতালের সেবার মান বৃদ্ধি করেন, হাসপাতাল আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধন করেন।
বর্তমানে তার কার্যালয়ের সামনে অনেক রোগির ভিড় দেখা যায়। বাসুদেব নামক এক রোগীকে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এখানে এসেছেন তিনি বললেন,আমার পাশের বাড়ির এক জটিল রোগী নারায়ণ ডাঃ মিজানকে দেখিয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন তাই আমিও তাকে দেখাতে এসেছি আর শুনেছি উনি রুগিদেরকে নিজের বাবা মায়ের মত যত্ন করে দেখেন।
সার্বিক বিষয়ে ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি হলাম প্রজাতন্ত্রের চাকর। সকল রোগী দেখি আমার সন্তান মনে করে। আর মানুষের সেবা দেয়াই হলো আমার কাজ, আমি এ কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য পেতে চাই।
Please follow and like us: