নড়াইলের কালিয়ায় রেকর্ডি সম্পত্তি জোরপূর্বক ভোগদখলের চেষ্টা

রিপন বিশ্বাস:
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়ীয়া ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামে জালাল শেখ (৬৬) এর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক রেকর্ডিও সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ করেছেন রেকর্ডিও মালিক ও ভোগদখলে থাকা আজিম শেখ (৬০)।
একাধিকবার গ্রাম্য শালিসে রায় অমান্য করে অবশেষে ১৬ আগষ্ট/২১ তারিখে আজিম শেখসহ তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাকে প্রতিপক্ষ করে নড়াইল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেছেন অভিযুক্ত জালাল শেখ।এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এস,এ ৬০৭ ও ৬০৪ দাগের মোট ১.৫৮ একর জমি রয়েছে। এই জমির মুল মালিক ছিলেন ওদেরই দাদা মৃত লবন শেখ। মৃত্যুকালে তিনি বাকাদ্দেস শেখ, ছিয়াকুল শেখ, খবির শেখ ও হাবিবার শেখ নামে ৪ ছেলে ও সুফিয়া বেগম, রনি বেগম, কুলসুম বিবি ও কাঞ্চন বিবি নামে ৪ কন্যাকে ওয়ারিশ হিসাবে রেখে যান। এদের মধ্যে বাকাদ্দেস শেখের ছেলে জালাল শেখ এবং ছিয়াকুল শেখের ছেলে আজিম শেখবলে তারা জানান।
এ বিষয়ে ২১ আগষ্ট (শনিবার) সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে আজিম শেখ জানান, আমি দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর যাবত ৫৬ নং কলাবাড়িয়া মৌজার ৩৯৩৭ (নতুন) ১৩৪ নং খতিয়ানে ডিপি ১৯৬, এস,এ ৬০৪ হাল ৪০৪ ও এস,এ ৬০৭ হাল ৫৬২ দাগে দলিল ও রেকর্ডমূলে ভোগদখলে আছি। ১৯৮৮ সালের ১২ জুন তারিখ আমি অভিযুক্ত জালাল শেখের পিতা বাকাদ্দেশ শেখের নিকট থেকে ২৬৬১ নং কবলা দলিল মুলে ৬০৪ দাগ থেকে সাড়ে ছয় শতক জমি ক্রয় করি। ১৯৮০ সালের ১৬ জুন আমার পিতা ছিয়াকুল শেখ কাজেম শেখের নিকট ৬০৪ দাগের ৫৬ শককের মধ্যে ১৪ শতক জমি বিক্রয় করেন (দলিল নং- ৪১৩৫/৪১২৬) এবং ওই একই জমি আমি ১৯৯২ সালে ২২ অক্টোবর কাজেম শেখের নিকট থেকে ক্রয় করে বাবার জমি উদ্ধার করি। যার দলিল নং- ৪৯৪৭। এদিকে আমার ফুফু রনি বেগম ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর আমার স্ত্রী শাহানাজ পারভীনকে ৬০৪/৪০৪, ৬০৭/৫৬২, ৫২৬/৫৬৬ ও ৩৯৭ দাগে তার হিস্যা থেকে ৫ শতক জমি দানপত্র দলিল করে দেন। দলিল নং- ৩৯০৮। ১৯৮৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আমি চাচা খবির উদ্দিনের নিকট থেকে ওই ৬০৭ ও ৬০৪ দাগ থেকে ৪৬৬৬/৪৬৫২ নং কবলা দলিলমূলে সাড়ে ৩৬ শতক জমি ক্রয় করি। আমি কাগজ অনুযায়ী প্রাপ্য জমি ভোগদখলকার আছি।
আজিম শেখ আরো বলেন, এ বিষয়ে আমি ভূমিদস্যু ও মিথ্যা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়দানকারী জালাল শেখের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তদন্তপূর্বক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
উল্লেখ্য যে, অভিযুক্ত জালাল শেখ নিজেকে ভাতাভোগী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করলেও স্বপক্ষে কোন কাগজ দেখাতে পারেন নাই এবং পরবর্তীতে তিনি ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওনার পরিবারের লোকজন বলেছেন, জালাল শেখের বয়স হওয়ার কারণে মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। কখন কি বলে ওনার মনে থাকেনা। নালিশী জমির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাগজ অনুযায়ী পৈত্রিক জমি পেতে চাই।
নালিশী জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ওই গ্রামের মৃত কিয়াম মোল্যার ছেলে ১১০ বছর বয়সী বৃদ্ধ পাচু মোল্যা, মৃত আফিল উদ্দিনের ছেলে অবঃ বিজিবি কর্মকর্তা হাজী শেখ আবুল কালাম (৬৫), কাজী বাদশার ছেলে শাহান কাজী (৩৯), নজরুল মোল্যার মেয়ে রোজিনা (৩৫), মৃত সাজেম শেখের ছেলে মানছুর শেখসহ অনেকে বলেন, জালাল শেখের পিতা বাকাদ্দেস শেখ অনেক আগেই আজিম শেখের কাছে জমি বিক্রি করেছে। এছাড়া অন্যান্য শরিকের কাছ থেকেও আজিম জমি কিনেছে। জালাল শেখ মান্ধাতার আমলের কিছু কাগজ যোগাড় করে শুধু শুধু নিরীহ লোকটিকে হয়রানি করছে বলে তারা জানান। তারা আরো বলেন, এই জমির পাশেই আমাদের বাড়ী। আমরা ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি এসমস্ত বাগ-বাগিচা আজিম শেখ খায়।
এ বিষয়ে উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নুরজাহান শিপ্রা বলেন, তদন্ত রিপোর্ট দাখিল না করা পর্যন্ত সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক আমি উভয় পক্ষকে নালিশী জমিতে না যাওয়ার জন্য বলে এসেছি।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)