ভরা মৌসুমেও ইলিশ নেই পদ্মা-মেঘনায়
নিউজ ডেস্ক:
ইলিশের সংকট প্রভাব ফেলেছে দেশের অন্যতম বড় ইলিশের বাজার চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছ ঘাটেও। ভরা মৌসুমেও জেলেরা দেখা পাচ্ছে না ইলিশের। তবে আগস্টের শুরু থেকে সাগর ও উপকূলের জেলাগুলোতে ইলিশ পাওয়া শুরু করেছে জেলেরা।
তাই অচিরেই চাঁদপুরের জেলেরাও পর্যাপ্ত ইলিশ পাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে বড়স্টেশন মাছ ঘাটে দেখা যায়, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনার ইলিশের আমদানি অনেক কম। নামার ইলিশ (হাতিয়া-সন্দ্বীপ) এর ইলিশে ভরপুর চাঁদপুর মাছঘাট। তবে ইলিশের শহর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার কাঙ্ক্ষিত ইলিশ নেই ঘাটে। মাছ ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে এখন ফতুর হওয়ার পথে।
বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মণ ইলিশ আহরণ করলেও, বর্তমানে তা নেমে এসেছে মাত্র ৫শ’ থকে ৬শ’ মণে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় ইলিশের দাম বেশ চড়া।
বর্তমানে ১ থেকে ১ কেজি ৪শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকায়। গত বছর যা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। ৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম কেজি প্রতি ১হাজার টাকায় বিক্রি হলেও গত বছর সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় ও ৪শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের মাছ কেজি প্রতি ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা কেজি দরে।
বর্তমানে নামার ইলিশ ১ কেজির উপরের ওজনের ৯ শ’ থেকে ১১ শ’ টাকা, ৭শ থেকে ৯শ গ্রাম ওজনের ৭ শ থেকে ৯শ টাকা ও ৪শ’ থেকে ৬শ’ গ্রাম ওজনের মাছ কেজি প্রতি ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। তবে নামার ইলিশ দামে একটু কম হওয়ায় চাঁদপুরের ইলিশ মনে করেই নিয়ে যাচ্ছেন।
জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সফল না হওয়া, নদী দূষণ, নাব্যতা সংকট, অপরিকল্পিত ড্রেজিং, নদীর তলদেশে থাকা ডুবো চর ও ইলিশের গতি পথ বদলের কারণে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার জানান, কয়েক বছর আগেও পদ্মা-মেঘনা নদীতে জেলেরা প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পেত। কিন্তু দিন দিন এ চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। আগের মৌসুমে স্থানীয় নদীতে জেলেরা প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১২শ’ মণ ইলিশ আহরণ করলেও বর্তমানে ২০-৩০ মণও হয় না। নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় জেলেদের অনেক কষ্টে দিন কাটছে।
তিনি আরো জানান, সাগর ও মোহনা অঞ্চলের ৫ থেকে ৬শ’ মণ মাছ এখন ঘাটে আসছে। এগুলোই ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, নাটোর, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শবে বরাত বলেন, মূলত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু এ বছর আগস্ট মাসের অর্ধেক সময় শেষ হয়ে গেলেও বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়েনি। ফলে বাজারে ইলিশের দামও বেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানান, পদ্মা-মেঘনা পানি দূষণের পাশাপাশি নদীতে ছোট-বড় অসংখ্য ডুবো চর থাকায় ইলিশ চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও ইলিশ নদীতে কম আসছে। এখন নামার যে ইলিশ আসছে তাতে বোঝা যায় সরকারি বিভিন্ন অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যদিও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের ভরা মৌসুম। ইলশাগুঁড়ি বৃষ্টি, নদীর পানি ঘোলা ও স্রোত বৃদ্ধি পেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ স্থানীয় জেলেদের জালে ধরা পড়বে।
তিনি আরো জানান, গত বছর দেশে ৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। এ বছর সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছি।
তবে আগস্টের শুরু থেকে সাগর ও উপকূলের জেলাগুলোতে ইলিশ পাওয়া শুরু করেছে জেলেরা। অচিরেই চাঁদপুরের জেলেরাও পর্যাপ্ত ইলিশ পাবেন।