কালিগঞ্জের পুলিশ ভাইয়ের দাপটঃবড় ভাইয়ের দখলীয় জমি জবরদখলের চেষ্টা
রঘুনাথ খাঁঃ
দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাবার
জীবদ্দশায় আপোষ সূত্রে বড় ভাইয়ের জমির ঘেরা ও গাছ গাছালি
কেটে তছনছ করে দিলেন পুলিশ ভাই আসাদুজ্জামান আসাদ।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার
শ্রীকলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিষ্ণুপুর পিকেএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক করিম বক্সের
ছেলে শ্রীকলা গ্রামের মাদ্রাসা সুপার ওহায়িদুজ্জামান জানান,
তার বাবা ২০১৩ সালে মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার আগে থেকেই
শ্রীকলা মৌজার হাল ১৯৬ দাগের ১১ শতক জমি তাকে দিয়ে
পার্শ্ববর্তী দাগ থেকে একই পরিমান জমি তার ভাই বর্তমানে
খুলনার বড় বহেরা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত সিপাহী
আসাদুজ্জামান আসাদকে দিয়ে যান। সে অনুযায়ি তিনি ১৯৬
দাগের জমিতে গাছ গাছালি লাগিয়ে ঘেরা ও বেড়া দিয়ে
ভোগদখলে আছেন। বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই আসাদ জমি নিয়ে
আপত্তি তোলায় তৎকালি পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম
সরেজমিনে যেয়ে পৈতৃক আপোষ বহাল রেখে মাপজরিপ করে
সীমানা পিলার বসিয়ে বিরোধের মীমাংসা করে দেন। ২০১৮ সালে
গাছ গাছালি কেটে ওই জমি আবারো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে
বাধা দেওয়ায় তার ভাই আসাদসহ কয়েকজন তাকে ও তার স্ত্রী
লাকীকে পিটিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায়
মামলা করেন তিনি। তার বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে বসবাসরত নজরুল
ইসলাম, মজনু, নাজিম ও নূর বক্সসহ কয়েকজনের যাতায়াতের
সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী হাসানুজ্জামান রাস্তা দেওয়ার শর্তে
তিনিও হাসানুজ্জামানকে রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার দিতে
আপোষনামা করেন। কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোসাদ্দেক আলীর
উপস্থিতিতে এ আপোষনামা হয়।
ওয়াহেদুজ্জামান আরো জানান, স¤প্রতি হাসানুজ্জামান ওই শর্ত
না মেনে রাস্তার উপর ঘর নির্মাণ করলে নজরুল ইসলামসহ চারটি
পরিবারের যাতায়াতের পথ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আসাদুজ্জামনের পরামর্শে নূর বক্স থানায় অভিযোগ করে। অভিযোগের তদন্তভার
আসাদুজ্জামানের ব্যাজ মেট সহকারি উপপরিদর্শক আলমগীর
হোসেন গ্রহণ করেন। তিনি যৌথ সম্পত্তি হিসেবে আসাদের
অংশ আছে বলে ঘেরা বেড়া কেটে তাকে সাড়ে তিন হাত জায়গা
বের করে দিতে বলেন তাকে। তিনি রাজী হনননি। প্রতিকার চেয়ে
তিনি শনিবার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত
অভিযোগ করেন। স্থানীয় দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের
সদস্য মনিরুল ইসলাম মণ্টু সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে আসাদের
বরাত দিয়ে মঙ্গলবার ঘেরা বেড়া কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান।
এ সময় উপস্থিত থাকা কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোসাদ্দেক
উভয়পক্ষকে বুধবার সকাল ১০টায় থানায় যাওয়ার জন্য বলে যান। এরই
ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আসাদের
নেতৃত্বে ইউপি সদস্য মন্টু, নূর বক্স কারিকর, তার স্ত্রী রাশিদা
খাতুন, নজরুল ইসলাম, আবুল কাশেমের স্ত্রী নাসিমা খাতুন
জোরপূর্বক রাস্তা বের করার জন্য তার এক যুগেরও বেশি সময় ধরে
থাকা বাঁশের বেড়া ভেঙে ও গাছ গাছালি কেটে দেয়। তুলে ফেলা
হয় সীমানা পিলার। বাধা দেওয়ায় তাকে, তার স্ত্রী ও ছেলেকে দা
দিয়ে হত্যার হুমকি দেয় আসাদ ও মন্টু মেম্বর। পরে নতুন করে ঘেরা
দিয়ে জমি দখল করার সময় পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম মন্টু বলেন,
ওয়াহিদুজ্জামান তার জমি বুঝে পাওয়ার জন্য তাকে ডাকলে তিনি
ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।
আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে
যোাগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান,
মঙ্গলবারের ঘটনার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পর উপপরিদর্শক
মোসাদ্দেককে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। লিখিত অভিযোগ পেলে
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।