সাতক্ষীরায় অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পৌরসভাসহ সব নিম্নাঞ্চল
রঘুনাথ খাঁঃ
সকাল থেকে টানা ১০ ঘন্টার বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা
পৌরসভার অধিকাংশ এলাকাসহ জেলার সব নি¤œাঞ্চল পানিতে তলিয়ে
গেছে। সাতক্ষীরা পৌরসভার সমস্ত নিচু এলাকাও এখন পানির নিচে।
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একইসাথে বৃষ্টি না কমায়
জলাবদ্ধতার কবলে থাকা এলাকগুলোতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল
৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই ৬ ঘন্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি
হয়েছে। ফলে পথঘাট, ডোবা, নালা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের
কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্যিপুর কলোনী, শহরতলীর বকচরা,
কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড় সবই এখন পানিতে তলিয়ে
রয়েছে। পানি অপসারনের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে
উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রানসায়ের খালও
পানি টানতে পারছে না। সদ্য খননকৃত খালের দু’পাশের মাটি ধ্বসে
পড়তে শুরু করেছে।
এদিকে গত ২৭ জুলাই বিকেল থেকে বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত
অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল,
রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিল সহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই
করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই
বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার
দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে
তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত শত টাকার মাছ। এছাড়া কাচা
ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুকির মধ্যে। সবজি ক্ষেত গুলি পানিতে টইটুম্বুর
করছে। মানুষের যাতায়াতও ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝাউডাঙা,
ঘোনা, বৈকারী ও হাড়দ্দহ এলাকায় পানিতে থই থই করছে। আমন ধানের
বীজতলা ও নতুন লাগানো ধান পানিতে ডুবে গেছে।
এদিকে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে দক্ষিন উপক‚লের শ্যামনগর
উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। সেখানে প্রধান রাস্তার ওপর দিয়েও পানি
প্রবাহিত হচ্ছে। আশাশুনি উপজেলা সদর, প্রতাপনগর, শ্রীউলা,
আনুলিয়া, খাজরা সহ কয়েকটি ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে
গেছে। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে
রাতভর কমবেশী বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে বাতাস বয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বেশকিছু এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। তালা উপজেলার
ইসলামকাটি, মাগুরা, কুমিরা, খেশরা, তেঁতুলিয়া, ধানদিয়াসহ
বিভিন্ন অঞ্চলের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও
মাছের ঘের। কালীগঞ্জের রতনপুর, কালিকাপুর, বিষ্ণুপুর, মথুরেশপুরসহ
বিস্তীর্ণ এলাকার মাছের ঘের, পুকুর ও সবজি খেত ডুবে ব্যাপক ক্ষতি
হয়েছে। দেবহাটার কোমরপুর, পারুলিয়া, সখীপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের
বেশ কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর ও ঘের। অনেক ঘরের
মধ্যে পানি ঢুকেছে। কলারোয়ার জয়নগর, ধানদিয়া, যুগিখালি,
সোনাবাড়িয়া, শ্রীপতিপুর, ব্রজবকসসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে
গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাঁস মুরগি ও গবাদি পশু
নিয়ে মানুষ চরম বিপদে পড়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে টিকা
নিতে আসা মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। সুযোগ বুঝে
ইজিবাইক চালক, মহেন্দ্র চালক ও মোটর চালিত ভ্যান চালকরা নিয়ম
বহির্ভুতভাবে অতিরিক্তি ভাড়া আদায় করেছেন। কঠোর লকডাউনের
সময়ে বৃষ্টি চলাকালিন সময় অধিকাংশ রাস্তায় পুলিশের দেখা মেলেনি।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন
জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকাল থেকে সাতক্ষীরায় ৭৪
মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে
বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই ৬ ঘন্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলে জানান
তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর
রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প-াবিত হয়েছে। এতে
সদ্য রোপা আমন, আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি
কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা
হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি ভারি বর্ষণ থেমে যায়, তাহলে রোপা আমন ও
বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা
প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল
বাছেদ জানান, হঠাৎ ভারি বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার
নিম্নাঞ্চল প-াবিত হওয়ায় মারাত্মক কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর আসেনি।এছাড়া অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে কোন নির্দেশনা পাননি
তারা।