ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

স্পোর্টস ডেস্ক:

তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-২০তে জয়ের জন্য বাংলাদেশকে ১৯৪ রানের বড় লক্ষ্য বেধে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। দারুন ব্যাটিংয়ে ম্যাচটি পাঁচ উইকেটে জিতেছে টাইগাররা। এর মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।

জিম্বাবুয়ের দেওয়া লক্ষ্য ৪ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে যায় বাংলাদেশ। এই জয়ে একই সঙ্গে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে টাইগাররা।

এর আগে ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে রান তাড়ায় ২১৫ রান করেছিল টাইগাররা, যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রিয়াদের দল আজ পেছনে ফেলেছে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৮ রান তাড়া করে জেতা ম্যাচকে।

হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। রান তাড়া করতে নামেন মোহাম্মদ নাইম ও সৌম্য সরকার। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন সৌম্য। প্রথম ওভারে একটি করে চার ও ছয় হাঁকান তিনি।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাফল্য পায় জিম্বাবুয়ে। মুজারাবানির বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩০ গজে সহজ ক্যাচ তুলে দেন ৩ রান করা নাইম।

অষ্টম ওভারে লুক জঙ্গওয়েকে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ঝড় তোলার আভাস দেন সাকিব। কিন্তু একই ওভারে ফের উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মেয়ার্সের তালুবন্দী হন তিনি। টাইগার অলরাউন্ডার ফেরেন ১৩ বলে ২৫ রান করে।

এরপর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন সৌম্য। তবে দীর্ঘসময় অনেক ধীরে খেলেন তিনি। একসময় এ ওপেনারের নামের পাশে ছিল ৩৬ বলে ৩৭ রান। তবে এরপরই বেরিয়ে আসেন খোলস থেকে।

৪০ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম অর্ধশতকের মাইলফলক স্পর্শ করেন সৌম্য। কিন্তু অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে আউট হন তিনি। জঙ্গওয়ের বলে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৯ বলে ৬৮ রান করেন এই ওপেনার। ছোট্ট ক্যামিও ইনিংস খেলে আফিফ ফেরেন ১৪ রানে।

এ ম্যাচে অনবদ্য ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি যখন মাঠ ছাড়েন তখন দলের জয় অনেকটাই নিশ্চিত। চাকাভার দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ২৮ বলে ৩৪ রান করেন তিনি।

নুরুল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বাকী পথ সহজেই পাড়ি দেন শামীম পাটোয়ারি। দুজনে ম্যাচ শেষে অপরাজিত থাকেন ১ ও ৩১ রানে। জিম্বাবুয়ের জঙ্গওয়ে ও ব্লেসিং মুজারাবানি দুটি এবং ওয়েলিংটন মাসাকাদজা একটি করে উইকেট শিকার করেন।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন তাদিওয়ানাশে মারুমানি ও ওয়েসলে মাধেভেরে। একদম প্রথম বলেই উড়িয়ে মারতে যান মারুমানি, তবে সে যাত্রায় বেঁচে যান।

দুই ওপেনারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম চার ওভারেই স্কোরবোর্ডে তারা সংগ্রহ করে ৪৮ রান। এর মাঝে চতুর্থ ওভারে তাসকিনের ওভারে টানা পাঁচ বলে ৫টি চার হাঁকান মাধেভেরে।

উড়ন্ত জিম্বাবুয়ে শিবিরে পাওয়ার প্লের শেষ বলে আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। তাকে মিড অনে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হন ২৭ রান করা মারুমানি।

মারুমানির বিদায়ে জিম্বাবুয়ের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে কোনো ছেদ পড়েনি। প্রতি ওভারেই বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন মাধেভেরে ও রেগিস চাকাভা। তবে ফিফটি থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে চাকাভাকে সাজঘরে ফিরতে বাধ্য করেন নাইম ও শামীম।

মাত্র ১১ ওভারেই ১২২ রান তুলে ফেলে জিম্বাবুয়ে। এমতাবস্থায় দ্বাদশ ওভারের প্রথম বলেও উড়িয়ে মেরেছিলেন চাকাভা। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে মোহাম্মদ নাইম ও শামীম পাটোয়ারির দুর্দান্ত নৈপুণ্যে ৪৮ রানে আউট হন তিনি। একই ওভারে রানের খাতা খোলার আগে বোল্ড হন সিকান্দার রাজা।

চাকাভা ব্যর্থ হলেও ওপেনিংয়ে নামা মাধেভেরে তুলে নেন চলতি সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি। সাকিবের বলে শরিফুল ইসলামের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে তিনি খেলেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস। এরপর নামা ডিওন মেয়ার্স ২৩ রানের বেশি করতে পারেননি।

শেষদিকে রায়ান বার্লের অপরাজিত ৩১ রানের ক্যামিও ইনিংসে জিম্বাবুয়ের বড় সংগ্রহ নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশের হয়ে সৌম্য সরকার একাই নেন ২ উইকেট। এছাড়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান একটি করে উইকেট শিকার করেন।

নিজেদের ইনিংসে মোট ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা, যা দলটি নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র চতুর্থবার করতে পেরেছে।

এই জয়ের মাধ্যমে চলতি সফরের তিনটি সিরিজই জিতলো বাংলাদেশ। এর আগে টেস্ট সিরিজ ১-০ এবং ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)