শতভাগ শিশুর শরীরে মিলেছে ভারতীয় ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্ট

নিউজ ডেস্ক:

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত শতভাগ শিশুর শরীরে ভারতীয় ‘ডেল্টা’ ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ১২ শিশুর নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স শেষে রোববার এ তথ্য জানান একদল গবেষক।

জানা গেছে, জুন থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের নমুনার ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। এতে নবজাতক থেকে শুরু করে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ডেল্টা ভেরিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া ১২ শিশুর মধ্যে ৬ জন ছেলে ও ৬ জন মেয়ে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন বয়সী আট মাসের শিশুও রয়েছে। বেশিরভাগ শিশুর মধ্যেই ছিল সর্দি-কাশি ও জ্বরের লক্ষণ। তবে এক শিশু পুরোপুরি উপসর্গহীন ছিল বলে জানানো হয় গবেষণায়।

এ গবেষণায় নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী ও ডা. আব্দুর রব মাসুম এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস ও ডা. নাহিদ সুলতানা।

সার্বিক পরিকল্পনায় ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান। আরো ছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. মিনহাজুল হক, ডা. রাজদীপ বিশ্বাস ও ডা. একরাম হোসেন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডা. ফাহিম হাসান রেজা।

জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের তত্ত্বাবধানে ছিলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির ভাইরোলজি বিভাগের গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন তারা।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, গত চার মাসের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে- চট্টগ্রামে আলফা ও বিটা ভেরিয়েন্টের প্রকোপ ছিল মে মাস পর্যন্ত। কিন্তু জুন থেকে ৯০ শতাংশ রোগীর মাঝেই ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট দেখা যাচ্ছে। এ পরিবর্তনের সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে শিশুদের মাঝে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়া।

গবেষকদলের অন্যতম ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস বলেন, গত এক বছরে তেমন উল্লেখযোগ্য হারে শিশুদের মাঝে কোভিড-১৯ দেখা যায়নি। তবে গত জুন থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে গেছে। মূলত ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণেই এমনটি হচ্ছে বলে আমাদের গবেষণায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, শিশুরা নিজেদের অনুভূতি কিংবা দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারে না। ফলে অনেককেই কোভিড টেস্ট বা শনাক্তকরণের আওতায় আনা যায় না। যা চিন্তার বিষয়ও বটে।

গবেষক চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, শিশুদের মাঝে কোভিডের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। এক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোতে তাদের জন্য বিশেষায়িত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রের প্রয়োজন বেড়ে যেতে পারে। ফলে এখন থেকেই শিশুদের স্বার্থে পরিবারের সবাইকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে, গবেষণায় পাওয়া সিকোয়েন্স ডাটা জার্মানি থেকে প্রকাশিত ভাইরাসের আন্তর্জাতিক তথ্যভাণ্ডার সংস্থা ‘গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা’-তে গৃহীত হয়েছে। শনিবার সকালে সিকোয়েন্সগুলো নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সংস্থাটি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)