কালিগঞ্জ থানার পুলিশ মনির কর্তৃক নারী শ্লীলতাহানি ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার, এ এস আই মনির কর্তৃক নারী শ্লীলতাহানি ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটে কালিগঞ্জ উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের মহেশকুড় গ্রামের, শেখ শুকর আলীর নাতনির সাথে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শেখ শুকর আলীর বাড়িতে থাকা নাতনি খুকুমনির সহিত শ্যামনগর থানার ভুরুলিয়া গ্রামের ছামসুর মোড়লের ছেলে বিল্লালের বিবাহ হয় প্রায় ৩ বছর পূর্বে। বিবাহের পর তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু তার স্বামী একজন নারী লোভী ও একাধিক বিবাহের হোতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায় গোপনে বিল্লাল বিভিন্ন জায়গায় ৪টি বিয়ে করেছে।

খুকুমনি জানায় যে, প্রায়ই তার স্বামী মাদক সেবন করে বাড়ি ফিরত,অহেতুক ঝগড়া ও প্রচুর মারধর করতো।

খুকুমনি আরো বলেন,আমার স্বামীসহ আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা আমাকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিত। কিন্তু আমার বাবা গরিব রিকশা চালক সব সময় টাকা দিতে পারতো না। চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় কয়েক মাস পূর্বে আমার শাশুড়ি,ননদ ও আমার স্বামী আমাকে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং আমাকে গুরত্বর আহত করে ফেলে রাখে । আমার বাবা মা জানতে পেরে আমাকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করে এবং আমি সুস্থ হলে সেখান থেকে আমার বাবার বাড়ি নুরনগরে থাকতে শুরু করি। আমার পরিবার একাধিক বার আমার স্বামীকে তার সংসারে নিয়ে যেতে বললেও তারা কেও আসেনি।

গত ১৪ জুলাই আমার ছেলে অসুস্থ হলে আমরা তাকে শ্যামনগর হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসা শেষে আমার নানার বাসা মহেষকুড়ে আসি এবং আমার স্বামী জানতে পারে তার ছেলে অসুস্থ। গত ১৪ তারিখ আমার নানার বাড়িতে রাত ১০ টার দিকে আমার স্বামী আসে। আমার স্বামীর পুনরায় বিয়ে করার বিষয় জানতে চাইলে আমার মায়ের সাথে এবং আমার সাথে কথা কাটাকাটি হয় । এক পর্যায়ে আমার স্বামী আমাকে মারধর করলে আমিও তার হাত থেকে বাঁচতে তার শরীরেও হাত তুলি এবং তখন আমার মা ও নানি ছুটে এসে ওর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করে। বিষয়টি আমার শ্বশুর বাড়ি ও মহেষকুড়ের মেম্বর রফিক আহম্মেদ রফুকে জানানো হলে ১৫ তারিখ সকাল ১১টার সময় আমার নানা বাড়িতে বসে আপোষ মীমাংসা করবে বলে আসস্ত করেন।

কিন্তু ১৫ তারিখ সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে লাগলো এবং আমার স্বামী তার বাড়িতে ফোন করলে তারা দুপুরে আসবে বলে জানায়। আমরা তখন সবার জন্য রান্না বাড়া করতে থাকি। আমার স্বামী, মামা ও এলাকার অনেকে উঠানের চিয়ারে বসে ছিলো সকলের অপেক্ষায় । হটাত দুপুর ১টার দিকে কালিগঞ্জ থানার, এ এস আই মনির স্যার মটর সাইকেলে এসে স্বামীর নাম ধরে ডেকে নিয়ে তার পরিবারের একটি মোটরসাইকেলে তুলে দেয় এবং আমার ছোট মামা শেখ তাজিম বিষয়টি জানতে চাইলে তাকে চড় মেরে আসামির মতো মোটরসাইকেলে উঠায়ে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে স্থানীয় সকলে তাজিমকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাই । এ এস আই মনির ও তার সহকারী মোটরসাইকেল ড্রাইভার অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজসহ কয়েক জনকে মারধর করে ।

আমার স্বামীকে ঘটনা স্থল থেকে মটর সাইকেল যোগে চলে যেতে নির্দেশ দেন এবং তারা চলে যায় । তখন আমি আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মনির স্যারের কাছে সকল বিষয় বলতে গেলে তিনি আমাকে শতাধিক মানুষের সামনে গালিগালাজ করে এবং আমার গলা ধাক্কা দেন,তখন আমি আমার ছেলেসহ পুকুরের পাশে নারিকেল গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায় এবং আমার ছেলের শরীরের কিছু অংশ ছিলে যায়। তখন মনির স্যার অনেক টা ঘাবড়ে গিয়ে, ভিডিও করতে শুরু করে এবং ওসি সাহেবকে ফোন করে ভুল তথ্য দিতে থাকে।

ততক্ষণে এলাকার মেম্বর রফিক আহম্মেদ রফু এসে হাজির হন এবং অসি সাহেবের সাথে কথা বলেন, তখন এ এস আই মনির আমার ছোট মামাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। এসময় আমি জ্ঞান হারায় এবং আর কি হয়ে ছিলো আমি জানিনা।

এলাকা সূত্রে জানাযায়, এ এস আই মনির মহেষকুড়ে শেখ শুকর আলীর বাড়ির উঠান থেকে তাজিমকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো এবং প্রকৃত আসামি নারী নির্যাতনকারী বিল্লালকে ওখান থেকে চলে যেতে সহায়তা করে।

এসময় এলাকাবাসী, তাজিমকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সকলের সাথে এ এস আই মনির অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ ও কয়েক জনকে মারধর করে। এলাকাবাসী আরো বলেন, আইন আজ কোন পর্যায়ে ? আমাদের সামনে ওই মেয়েটিকে মনির স্যার গলা ধাক্কা দিয়ে বাচ্চাসহ গাছের উপর ফেলে দিল, ওই বাচ্চাটির পিঠ ছিলে গেল, আমরা কথা বলে প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। এত বাজে ব্যবহার যে মানুষ করতে পারে জানা ছিলো না । উল্টা সকলের ভিড়িও করে নিয়ে গেছে। না জানি বিনা অপরাধে আবার কোন মামলায় ফেঁসে যাই। দেশের আইন আজ কোন পার্যায় ? আমাদের বাগ স্বাধীনতাটুকু নেই ?

এসময় এলাকাবাসী “এ এস আই মনিরের বিচার চাই” ¯স্লোগান দিতে থাকেন এবং এ এস আই মনিরের বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এবিষয়ে মহেষকুড়ের মেম্বার রফিক আহমেদ রফুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বিষটি আমি জানি এবং সকালে আমার মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য বসার কথা ছিলো। কিন্তু আমি গিয়ে দেখি সেখানে পুলিশ এবং তাজিম নামের ছেলেকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিলো পরে আমার সাথে কথা বলে তাজিমরে ছেড়ে দিয়ে যায়।

এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার, এ এস আই মনিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,আমি ওখানে অভিযোগ পেয়ে আসামি ধরতে গিয়ে ছিলাম,কারো সাথে খারাপ আচরণ করিনি,ওখানের মেম্বার জানেন এবং আমি ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানিয়েছি,তারা আমার কাছ থেকে আসামি কেড়ে নিচ্ছিল,পরে মেম্বারের উপস্থিতিতে,আসামিদের ছেড়ে দিয়ে আসি।

এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার,অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন,আমি এবিষয়ে অবগত নেই,কিন্তু বিষয়টি এখন শুনলাম আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)