আশাশুনিতে নবজাতক হত্যা;অনুসন্ধানে মিললো শিশুটির পরিচয়ঃ থানায় মামলা

রঘুনাথ খাঁঃ

প্রসবের পর অজ্ঞান মায়ের কোল থেকে
সদ্যজাত শিশুটি কে নিয়ে ব্রীজের ওপর থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে চরের কাদা পানিতে ছুড়ে ফেলে দেয় তার শ্বশুর কার্তিক মন্ডল। শিশুটি
ছিল কন্যা সন্তান ও অসুস্থ তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার নামে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাবার কথা বলে নির্মমভাবে ছুড়ে ফেলা হয়। শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার ও পরে সাতক্ষীরা হাসপাতালে তার মৃত্যুর পর অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য
বেরিয়ে এসেছে। একই সাথে শিশুটির মা বাবাসহ অন্যদের পরিচয়ও মিলেছে । সোমবার রাতের কোনো এক সময় আশাশুনির কুল্যা গুনাকরকাটি ব্রীজের ওপর থেকে ছুড়ে ফেলা শিশুটি গ্রামবাসীর নজরে এলে মঙ্গলবার সকালে আঘাতে মাথা
থেতলানো নবজাতককে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন কুল-া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসেত আল হারুন। বিষয়টি থানায় জানালে আশাশুনি থানা পুলিশ শিশুটিকে পরম যত্নে সাতক্ষীরা সদর
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে। এদিন দুপুরে ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে মারা যায় শিশুটি। এর পর থেকে শুরু হয় শিশুটির পরিচয় জানার চেষ্টা। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন
সংবাদপত্র ও গনমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে কন্যা শিশুটির মায়ের নাম দীপিকা মন্ডল। তার স্বামীর নাম মৃন্ময় মন্ডল মন্ময়। মন্ডলের বাবার রাম কার্তিক মন্ডল। আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনয়নের ফকরাবাদ
গ্রামে তাদের বাড়ি। অন্তঃসত্তা হওয়ার পর থেকে দীপিকা ছিলেন আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা বাজারের জনসেবা ক্লিনিকের কেয়ারে। প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে তাকে ভর্তি করা হয় ওই ক্লিনিকে। সিজার অপারেশনের মাধ্যমে সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তানের । আলট্রাসনা রিপোর্টে আগেই চানা যায় শিশুটি কন্যা সন্তান।
গ্রামবাসী ওই পরিবারের বরাত দিয়ে জানান সন্তানটি কন্যা হলে তাকে ঘরে রাখা হবে না। এমনকি প্রয়োজন হলে শিশুটির মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, প্রসবের পর মা দিপীকা মন্ডল যখন অচেতন তখনই তার কাছ থেকে সদ্যজাত শিশুটিকে চিকিৎসার নাম করে নিয়ে যায় দিপীকার শ্বশুর কার্তিক মন্ডল। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে নিয়ে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল বলে জানিয়েছেন ওই ক্লিনিকের সেবিকারা। তারা বলেন, রাতে মেয়েদের পক্ষে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে
বিবেচনায় দিপীকার শ^শুর ক্লিনিকে চলে আসেন। পরে তিনিই শিশুটিকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। সেবিকারা আরও জানান, এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। অপরদিকে জ্ঞান ফেরার পর দিপীকা তার সন্তানকে খুজতে থাকেন। এসময়
তাকে বলা হয়, চিকিৎসার জন্য তাকে সাতক্ষীরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দিপীকা বলেন, আমি আমার সন্তানটির মুখ দেখতেও পারিনি।

অনুসন্ধানে এসব তথ্য আসার পর তা পুলিশের কাছে পৌছায়। এমনকি ফেসবুকে দিপীকা মন্ডল ও দিপীকার শ^াশুড়ি উর্মি মন্ডলের ছবি ও কথা ভাইরাল হয়। এতে দিপীকার শ^াশুড়ি উর্মি মন্ডল
জানান, তার স্বামী কার্তিক শিশুটিকে নিয়ে গেছে। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবহিত নন।

অনুসন্ধানে এসব তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোঃ গোলাম কবির জানান, আমি এসব তথ্য সংগ্রহ করেছি। এ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কার্তিক মন্ডল ও তার ছেলে মৃন্ময় মন্ডল দুজনেই দর্জির কাজ
করেন। তারা গাঢাকা দিয়েছেন। ওসি জানান, এ বিষয়ে কুল-া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসেত আল হারুন বাদি হয়ে কারো নাম উলে-খ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।ওসি আরও জানান, শিশুটির ডিএনএ নমুনা রাখা হয়েছে।
অচিরেই আসামীরা ধরা পড়বে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)