সৌদি আরবের কারাগারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন নারী বন্দিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সৌদি আরবের কারাগারে আটক নারী রাজনৈতিক বন্দিরা অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, কারাগারে নারী বন্দিদের ইলেক্ট্রিক শক, মারধর, বেত্রাঘাত ও যৌন নির্যাতনের মতো জঘন্য হুমকি দেয়া হয়। নারী ভুক্তভোগী ও একজন গার্ডের সাথে কথা বলে এমন তথ্য প্রকাশ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
প্রকাশত প্রতিবেদন বলছে, নারী অধিকারকর্মী লুজাইন আল হাথলুলের মতো নারী রাজনৈতিক বন্দিদেরও এ ধরনের নির্যাতন সইতে হয়েছে। লুজাইনকে ইলেক্ট্রিক শক ও নজিরবিহীন যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কারাগারে তাকে নানাভাবে শ্লীলতাহানি এবং উপহাস করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকার নেয়া গার্ড বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক নারী অধিকারকর্মীকে এমনভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল, ধারণা করা হচ্ছে তিনি বোধহয় মারাই গেছেন। নির্যাতনের পর ওই নারী অধিকারকর্মী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এতে কারাগারের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কারণ কারাগারের মধ্যে কোন বন্দিকে মেরে ফেলার বিধান নেই।
সৌদি আরবের কারাগারে এমন আচরণের সমালোচনা করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আমেরিকা অঞ্চলের উপপরিচালক মাইকেল পেজ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নারী অধিকারকর্মী ও হাই-প্রোফাইল বন্দিদের ওপর নির্যাতন সৌদি আরবের আইনের শাসনের অবজ্ঞার শামিল। এসব অভিযোগের সঠিক তদন্তের দাবি জানান তিনি।
২০১৭ সালের পর থেকে সৌদি আরবে দমনপীড়ন বাড়িয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এর বেশি শিকার অধিকারকর্মীরা। প্রিন্সের এমন আচরণে বহুসময় সমালোচনা কুড়িয়েছে সৌদি আরব।
এছাড়া সম্প্রতি সৌদি আরবের এক যুবরাজের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে সাত নারী। অভিযোগকারী সাত নারীর বেশিরভাগই ফিলিপিন্সের। যারা ফ্রান্সে যুবরাজের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
এদিকে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছে ফ্রান্সের আদালত। ফরাসি প্রসিকিউটরা বলছেন, বিষয়টি তারা গভীরভাবে তদন্ত করছেন।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদন বলছে, সাত নারীর অভিযোগ তাদের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে রাখা হতো। যুবরাজের মালিকানাধীন ওই অ্যাপার্টমেন্টে তাদের সাথে আধুনিককালের দাসদের মতো আচরণ করা হতো।
ফরাসি গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৫ সালে ওই নারীদের সাথে নিম্নমানের আচরণ করা হয়েছে। নারীদের অভিযোগের পর সৌদি যুবরাজের বিরুদ্ধে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।
এর আগে নিজের অ্যাপার্টমেন্টের এক কর্মীকে মারধর করার অভিযোগে সৌদি আরবের প্রিন্সেস হাসসা বিনতে সালমানের ১০ মাসের স্থগিত জেল দেওয়া হয়েছিল এবং জরিমানা করা হয়েছিল ১১ হাজার মার্কিন ডলার।
সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ বহুদিনের। এনিয়ে বারবার সমালোচনাও করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের দাবি সৌদি আরবে বর্তমান কাফালা পদ্ধতিতে সংস্কার প্রয়োজন। যার মাধ্যেমে দেশটিতে গৃহকর্মী নিয়োগ করা হয়।
সূত্র: মিডল ইস্ট আই