চিকিৎসক সংকট: ৪২তম বিশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণদের নিয়োগের দাবি
নিউজ ডেস্কঃ
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নানা সংকট সামনে আসছে। এর মধ্যে জনবল সংকট চোখে পড়ার মতো। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সরকারি হাসপাতাল গুলোতে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার চিকিৎসক পদ শূন্য।
গত দেড় বছরে মহামারী করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুরবস্থা। সীমান্ত জেলায় দিন দিন করোনা রোগীর বাড়ছে। হাসপাতালে গিয়ে সন্তোষজনক সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। অসহায় রোগীদের আশঙ্কাময় চাহনি দেখা যায় প্রতিনিয়ত।
অথচ এসময়ে এ খাতে শূন্য পড়ে আছে ৫৪ হাজারের বেশি পদ। এর মধ্যে চিকিৎসক পদই ফাঁকা ১১ হাজার ৩৬৩টি। চিকিৎসকের শূন্য পদের বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত বছর ২০ নভেম্বর জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন।
নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সার্বিক অবস্থা আরও শোচনীয়, ৪৩ হাজার ৪২২টি পদ ফাঁকা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
রোগীর চাপে চিকিৎসক, নার্সের অভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাকে চিহ্নিত করছে। এই সংকট গুলো কাটিয়ে উঠাতে দ্রুত ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি করছেন পরীক্ষার্থীরা।
৪২তম বিশেষ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ৩১ হাজারেরও অধিক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ হাজার ২২ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর মৌখিক পরীক্ষা অর্ধেকেরও বেশি হওয়ার পর, করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
কিন্তু পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসক নিয়োগ এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন পরীক্ষার্থীরা।
শনিবার (১০ জুলাই) প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে ডা. অর্নব ডক্টর টিভিকে বলেন, ৪২তম বিশেষ বিসিএসে যাদের মৌখিক পরীক্ষা বাকি আছে তাদের অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ে নিয়োগ সমপর্ণ করতে পারলে দেশের চিকিৎসক সংকট কিছুটা হলেও দুর করা সম্ভব। এ পরীক্ষা যদি সরাসরি না নেওয়া যায়, তাহলে অনলাইনে নেয়ার পরামর্শ তাঁর।
গত বছরের ১ মার্চ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ উল্লেখ করা হয়েছিল। পরে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে সেই বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা প্রার্থীদের মধ্য থেকে চার হাজার নার্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। করোনা পরিস্থিতি আরও নাজুক হলে সম্প্রতি আরও নার্স নিয়োগের তাগিদ দেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকার পিএসসিকে আবেদনকৃত প্রার্থীদের মধ্য থেকে আট হাজার ৫৩৪ জন নার্স নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। গত বুধবার (৭ জুলাই) সেই চাহিদাপত্র পিএসসিতে আসে।
এদিকে শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক চার হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এই চার হাজার চিকিৎসক যেন ৪২তম বিশেষ বিসিএস এর প্রিলিমিনারি (লিখিত) পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নেওয়া অনুরোধ পরীক্ষার্থীদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে হাসপাতাল আছে ৫ হাজার ৬৬৬টি। নিবন্ধিত ডাক্তার এক লাখ দুই হাজার ৯২৭ জন। আর নার্স আছেন মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। আর নিবন্ধিত প্যারামেডিক রয়েছে ১২ হাজার ৩১৪ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একজন চিকিৎসকের সঙ্গে তিনজন নার্স ও পাঁচজন টেকনিশিয়ান থাকা উচিত। প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য ২৩ জন চিকিৎসক থাকা দরকার। সে হিসাবে দেশে প্রায় ৪ লাখ চিকিৎসক দরকার।