সেই রাতে পরীমনি কী করেছিলেন জানালেন নাসির

বিনোদন ডেস্ক:

চিত্রনায়িকা পরীমনির করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলায় কয়েকদিন জেলে থাকেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ। ২৯ জুন আদালতে জামিন পান তিনি। সেই রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল এর বর্ণনা দিয়েছেন নাসির। রোববার সাংবাদিকদের কাছে বিবৃতি পাঠিয়ে ওই ঘটনার বর্ণনা দেন।

বিবৃতিতে নাসির দাবি করেন, ৮ জুন রাতে পরীমনি ক্লাবে মদ পান করেন। একটি দামি ব্র্যান্ডের মদের বোতল সঙ্গে করে নিয়ে আসতে চান। এতে বাধা দিলে ক্লাবে তাণ্ডব চালান। তাণ্ডবে বাধা দিলে তিন-চারদিন পর তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার (নাসির) নামে মিথ্যাচার করেন।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে নাসির বলেন, সম্প্রতি আমাকে নিয়ে প্রচারিত একটি মিথ্যা ঘটনা নিয়ে নায়িকা পরীমনি যে অপপ্রচার করেছেন তা আপনারা এরই মধ্যে জেনেছেন। আপনাদের সদয় অবগতির জন্য সেদিন আসলে কী ঘটেছিল তা আমি বলতে চাই।

‘আমি ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে ক্লাবের ডিসিপ্লিন, মেনটেইনেন্স, কালচারাল অ্যাফেয়ার্স ও এন্টারটেইনমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত। সেদিন রাত আনুমানিক ১২টায় বোট ক্লাবেরই একজন সদস্যের সঙ্গে তিনজন অতিথি ক্লাবের বারে ঢোকেন।

আমি তখন অন্য টেবিলে অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসে ছিলাম। আমি দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম তারা (পরীমনিসহ ওই চারজন) মদ্যপ অবস্থায়ই ক্লাবে ঢোকেন। এ অবস্থায় তারা আমাদের পাশের একটি টেবিলে বসেন এবং ওয়েটারদের ড্রিংকসের বোতল দিতে বলেন।

ওয়েটাররা এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে সার্ভ করেন, তা অতি দ্রুত তারা শেষ করে ফেলেন এবং আরো এক বোতল ড্রিংকস টেবিলে আনান। সেই বোতলের অর্ধেকেরও বেশি শেষ করে ফেলেন। এ সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরীমনি (যার নাম আমি পরে জেনেছি) একটি দামি তিন লিটারের ‘ব্লুলেবেল’র বোতল বারের সেলফ থেকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে টেবিলে আসেন এবং তার সঙ্গে নিতে চান।

এ সময় ওয়েটাররা তা নিতে বাধা দিলে পরীমনি ক্ষিপ্ত হন এবং ওয়েটারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে টেবিলে রাখা প্লেট-গ্লাস অনবরত ছুড়ে ভাঙতে থাকেন।

যেহেতু আমি ক্লাবের ডিসিপ্লিনারি ইনচার্জ, সেহেতু বিষয়টির ব্যাপারে ওয়েটাররা আমার সাহায্য চান। তখন আমি পরীমনিদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে বলি এই ড্রিংকসের বোতল বিক্রিযোগ্য নয়।

সেসময় পরীমনি আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং টেবিলে রাখা প্লেট, গ্লাস ছুড়ে মারতে থাকেন। আমি তাকে বারবার অনুরোধ করি, যেন তিনি এসব থেকে নিভৃত হন। কিন্তু পরীমনি তা না শুনে উল্টো আমাকে লক্ষ্য করে গ্লাস ছুড়তে থাকেন এবং এক সময় একটি গ্লাস আমার ঘাড়ে লাগে। পরে আরো গ্লাস ছুড়তে চেষ্টা করলে আমি তাকে শান্ত হতে বলি। সেই মুহূর্তে তার সঙ্গে আসা জিমি (পরে নাম জেনেছি) আমার ওপর চড়াও হয়।

এ অবস্থায় ক্লাবের বাইরে দায়িত্বরত সিকিউরিটি স্টাফদের ডাকি। কিছুক্ষণ পরেই ক্লাবের সিকিউরিটিরা উপস্থিত হন এবং বলি তাদের ক্লাব থেকে বের করে দাও। এ কথা বলে আমি ক্লাব ত্যাগ করি।

ঘটনার চার-পাঁচ দিন পর পরীমনি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আমাকে নিয়ে তার মিথ্যাচারে আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি।

ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী নাসির বিবৃতিতে আরো বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মহামান্য আদালতের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। আমার বিশ্বাস, আমি ন্যায় বিচার পাব।

১৩ জুন সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন, তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি।

একই রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমিকে নিয়ে আশুলিয়ার একটি ক্লাবে যান। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

পরদিন ১৪ জুন সাভার থানায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমনি। ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে নাসির ও অমি এবং তিনজন নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)