সাতক্ষীরার বাবুলিয়ায় দেবরের বিরুদ্ধে বউদির একের পর এক হামলা
রঘুনাথ খাঁ:
পৈতৃক জমির অংশ থেকে বঞ্চিত করতে দেবর, প্রতিবেশী ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদরের বাবুলিয়া গ্রামের পূর্ণিমা সাহার বিরুদ্ধে। স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করতে যাওয়ায় মামলার আসামী হতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধি ও বাজার কমিটির সভাপতিকে।
সাতক্ষীরা সদরের বাবুলিয়া সাহাপাড়ার সুবোল চন্দ্র সাহার ছেলে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে কর্মরত তপন কুমার সাহা জানান, ২০০৮ সালে তার বাবা ক্যান্স্যার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া ১০ বিঘা বিলান ও তিন বিঘা জমির মালিক হন তিনিও বড় ভাই স্বপন সাহা। এক বিঘা জমি বড় ভাই বিক্রি করার পর সমান অংশ তিনি দখলে নিতে চাইলে তাকে বার বার মারপিটের শিকার হতে হয়। ভিটা বাড়ির তিন বিঘার মধ্যে তিন শতক জমিতে তিনি ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করলেও বাকী অংশ তাকে দখলে না দিতে মরিয়া বড় ভাই ও বউদি। এ ছাড়া নেবাখালি বিলের তিন বিঘাসহ অন্যান্য জায়গার তিন বিঘা জমি তার ভাগ দেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে তিন বার শালিসি বৈঠক হলেও মাপ জরিপ মেনে নেয়নি বউদি পূর্ণিমা। শালিস করায় ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ইউপি সদস্য সামছুর রহমান, বাবুলিয়া বাজার কমিটির সভাপতি শওকত হোসেন, চাচাত ভাই কানাই সাহা, পরিতোষ সাহা, মিলন সাহাসহ অকেকের নামে ঘর জ্বালানি মামলা সহ মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। থানায় মামলা না নেওয়ায় আদালতে মামলা করে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে প্রতিবেদন নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ঘর জ্বালানি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক রইচউদ্দিন তার প্রতিবেদনে পূর্ণিমা রানীর মিথ্যাচারের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গেছেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলীর অনুরোধে সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মীমাংসার উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা ভেস্তে যায়। ফলে পূর্ণিমা সাহা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। স্বপন সাহা মাদক বিক্রি সেবনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক হলেও যাদুকরী পূর্ণিমা তাকে ছাড়িয়ে আনতে সমর্থ হয়। সর্বোপরি চলতি বছরের ৫ মার্চ তাদের বাড়িতে হামলা, মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনায় তার স্ত্রী হৈমন্তী সাহা বাদি হয়ে থানায় মামলা করে। একই ঘটনা দেখিয়ে হাসপাতালে কাল্পনিক জখম দেখিয়ে বউদি পূর্ণিমা তাকে ও তার স্ত্রীকে আসামী করে কাউন্টার মামলা করে।
সরেজমিনে রোববার বিকেলে বাবুলিয়া সাহাপাড়ায় গেলে কালী রানী সাহা, পরিতোষ সাহা, কেনারাম সাহা, ইউপি সদস্য সামছুর রহমান, বাবুলিয়া বাজার কমিটির সভাপতি শওকত আলীসহ কয়েকজন জানান,৪৫ হাজার টাকা নিয়ে স্থানীয় ভাবে মীমাংসার পর জমি ভাগাভাগির ব্যাপারে এফিডেফিড করে দেওয়ার কথা বলেও এড়িয়ে যায় স্বপন ও তার স্ত্রী পূর্ণিমা। টাকা ফেরৎ চাওয়ায় ২০১৭ সালের ৭ জুলাই কাল্পনিক মারপিট ও লুটপাটের অভিযোগ এনে পূর্ণিমা সাহা তপনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১০ জুলাই থানায় এজাহার দেয়। থানা মামলা না হওয়ায় ১১ জুলাই আদালতে নাটকীয় কায়দায় বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা করে । বিচারক এক দিনের মধ্যে মামলা রেকর্ড করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই মামলাকে সামনে রেখে পূর্ণিমা বাদি হয়ে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল বাড়িতে হামলা ও মারপিটের মিথ্যা অভিযোগে সিআরপি ৭৮/১৮ মামলা করে। চাচাত ভাই কানাই সাহাসহ তার পরিবারের সদস্যদের উপর ২০১৯ সালের ৯ জুন হুমকি ধামকির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয় স্বপন ও পূর্ণিমার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া হুমকি ধামকির ঘটনায় কানাই সাহা ২০১৭ সালের ১২ জুলাই নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করে। সবশেষ পূর্ণিমা সাহার দায়েরকৃত মামলায় আত্মগোপন করায় তাকে (তপন) অফিস প্রধান বরখাস্ত না করলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এ সুযোগে ঘরের দরজায় লাগানো তালার মধ্যে সিমেন্ট ও বালি ঢুকিয়ে ঘরের টিনের চাল সরিয়ে ভিতরের দরজার তালা ভেঙে তার সংসারের চার লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করেছে ভাইপো সৌমিক, দাদা স্বপন, বউদি পূর্ণিমা, তার মা গীতা সাহা। বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার থানায় অভিযোগ করলে রোববার উপপরিদর্শক দেব কুমার দাস ঘটনাস্থলে এসে ঘটনার সত্যতা পেলেও আজো পর্যন্ত লুটপাট অব্যহত রয়েছে। এ ছাড়া নেবাখালি বিলে ১৬ কাঠা জমি আব্দুল সালামের কাছে ভাগে দিলে ওই জমির ইরি ধান পুলিশের ভয় দেখিয়ে তপনের অংশ নিয়ে আসেন স্বপন ও তার স্ত্রী পূর্ণিমা।
স্থানীয়রা জানান, দু’ ভাইয়ের জমির অধিকার সম বন্টন না হলে প্রতি মুহুর্তে চরম অশান্তি বিরাজ করবে ওই দু’ পরিবারের মধ্যে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে স্বপন সাহা এর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে পূর্ণিমা সাহার নাম্বারে যোগাযোগ করলে তার ছেলে সৌমিক সাহা জানায়, মা থানায় গেছে দারোগার কাছে।
হৈমন্তী সাহা ও পূর্ণিমা সাহার দায়েরকৃত একই দিনে একই ঘটনার পাল্টাপাল্টি মামলার পরির্তিত তদন্ত কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার শর্মা জানান, আদালতের নির্দেশে সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি সনদের জন্য আবেদন করা হলেও এখনো পাননি। দু’ সহোদরের পরিবারের মধ্যে বিরোধ চরম পর্যায়ে উলেখ করে তিনি বলেন, মামলার দু’টির তদন্ত প্রতিবেদন দ্রুত আদালতে পাঠানো হবে।
সদর থানার উপপরিদর্শক দেব কুমার দাস জানান, হৈমন্তি সাহার বাড়ি থেকে মালপত্র লুটপাট করে নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে সত্যতা পেয়েছেন উলেখ করে বলেন, সহোদর দু’ ভাইকে নিয়ে লকডাউনের পরপরই আলোচনায় বসা হবে।