দাম বাড়বে যেসব পণ্যের
নিউজ ডেস্ক:
২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন ধরনের পণ্যে শুল্ক ও কর আরোপের ফলে আগামী অর্থবছরে অনেক পণ্যের দাম বাড়বে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
একই সঙ্গে এটি দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট হতে যাচ্ছে। ৫০তম এ বাজেটে অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদান বাদ দিলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
তবে, ঘাটতি পূরণের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এজন্য অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক খাত থেকে নেওয়া হবে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার এক কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে-
বডি স্প্রে ও প্রসাধনী পণ্য
আমদানি করা বিলাসী পণ্য যেমন- বডি স্প্রে ও প্রসাধনী পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ হতে পারে। ফলে এসব পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে।
সিগারেট
প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের নিম্ন স্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৯ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম ৬৩ টাকা ও তদূর্ধ্ব, উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১০২ টাকা ও তদূর্ধ্ব, অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৩৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব এবং এই তিনটি স্তরের সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২০-২০২১ বাজেটে ১০ শলাকার সিগারেটের দাম ছিল ৩৭ টাকা। সেখানে সম্পূরক শুল্ক ছিল ৫৫ শতাংশ। মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য ছিলে ৬৩ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ছিলে ৬৫ শতাংশ। উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের মূল্য ছিল ৯৩ টাকা ও ১২৩ টাকা। সম্পূরক শুল্ক ছিল ৬৫ শতাংশ।
বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি ফিল্টার বিযুক্ত বিড়ির ২৫ শলাকার দাম ১৮ টাকা, ১২ শলাকার দাম ৯ টাকা ও ৮ শলাকার দাম ৬ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি। ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির ২০ শলাকার দাম ১৯ টাকা ও ১০ শলাকার দাম ১০ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করছি।’
স্মার্ট ফোন
দেশীয় পণ্য সুরক্ষায় শুল্ক আরোপের কারণে আমদানি করা স্মার্ট ফোনের দাম আরেক দফা বাড়বে। সেক্ষেত্রে সুবিধা পাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো।
গাজর, মাশুরুম, কমলা ও ক্যাপসিকাম
প্রস্তাবিত বাজেটে গাজর ও মাশুরুম আমদানিতে শুল্ক হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেইসঙ্গে গাজর, মাশরুম, কাঁচামরিচ, টমেটো, কমলা ও ক্যাপসিকাম-এর ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
শিল্প লবণ
শিল্প লবণের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। এতদিন শিল্প লবণের নামে ভোজ্য লবণ আমদানি হত। এখন দুই লবণের করহারের সমন্বয় করা হয়েছে।
বিস্কুট ও সমজাতীয় সুগার কনফেকশনারি
বিস্কুট ও সমজাতীয় সুগার কনফেকশনারির ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম অনেকটাই বাড়বে।
আমদানি করা মাংস
মাংস আমদানিতে শুল্ক হার বাড়ানো হয়েছে। বসানো হয়েছে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট। আবার ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশি মাংসের দাম বাড়বে।
মদ-বিয়ার
বর্তমানে মদ আমদানিতে অন্যান্য শুল্কের সঙ্গে পাঁচ শতাংশ অগ্রিম কর নেওয়া হয়। নতুন বাজেটে কর বাড়িয়ে ২০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী নন-অ্যালকোহলিক বিয়ার, মল্ট থেকে প্রস্তুত বিয়ার, তাজা আঙুরের ও এবং ফর্টিফাইড জাতীয় মদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে কর বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমদানি করা বিদেশি মদের দাম বাড়তে পারে।
টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার
টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার পণ্যের পরিবেশক ও ডিলারদের নিট কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। তাই টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
থিম পার্কের রাইড
এমিউজমেন্ট পার্ক স্থাপনের রাইডসামগ্রীর ওপর ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাই শিশুদের বিনোদনকেন্দ্র স্থাপনের খরচ বাড়তে পারে।
বিদেশি সাবান
সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বিদেশি সাবানের দাম বাড়তে পারে।
চুইং গাম
চুইং গামের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়বে পণ্যটির।