আশাশুনিতে করোনায় নতুন মৃত্যু-৫, মোট আক্রান্ত ৭৯॥হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য নেই !
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :
করোনা ভাইরাসের ২য় ঢেউয়ের ছোবল আশাশুনিতে বেশ বেড়েই চলেছে। জেলার সকল উপজেলা করোনা প্রতিরোধে যখন চিন্তিত হয়ে পড়েছে, তখন আশাশুনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেনা। এপর্যন্ত করোনা উপসর্গ বা করোনা আক্রান্ত হয়ে একের পর এক করোনা পজেটিভ রোগির খবর আসার পরও মানুষের মধ্যে নেই সচেতনা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণও ততটা হচ্ছেনা।
গত বছর আশাশুনি উপজেলায় ৪১ জন করোনা পজেটিভ হয়েছিল। যার অধিকাংশই ভিন্ন জেলা থেকে আক্রান্ত হয়ে আশাশুনিতে এসেছিল। এসময় মারা গিয়েছিল ৩ জন। এ হিসেব আশাশুনি হাসপাতালে যথারীতি ছিল এবং তাদেরকে কঠোর ভাবে হোম কোয়ারিন্টিন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিন বা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
২য় ঢেউয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ও ভারত থেকে আগত রোগিদের আগমনের মধ্যদিয়ে আশাশুনিতে করোনা রোগির আবির্ভাব ঘটে। ২য় ধাপে আশাশুনিতে এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে (হাসপাতাল) ৩৮ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। ২৪ মে একদিনে ৬ জন করোনা পজেটিভ হয়েছে। তখন ছিল রোগির সংখ্যা ২৩ জন (২য় ধাপ)। এরপর ৫দিনে আরও ৫ জনের করোনা পজেটিভ এসেছিল। এ পর্যন্ত সর্বমোট (১ম ও ২য় ধাপ) ৭৯ জন করোনা পজেটিভ এসেছে। সবশেষ ২ জুন ৪ জনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য ২য় ধাপে করোনায় কোন মৃত্যু হয়েছে এমন কোন তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নেই।
উপজেলার দক্ষিণ চাপড়া গ্রামে বাশারত হোসেন (৫৫), গুনাকরকাটি গ্রামের আঃ আলিম (৬০), গোদাড়া আল মাদানি দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক আব্দুল মজিদ করোনা পজিটিভ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। এছাড়া খরিয়াটি গ্রামের উজ্জল চৌকিদারের মা পার্বতী রানা রাহা (৬০), উত্তর চাপড়া গ্রামের বাক্কার (৪৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিঃ আ ব ম মোছাদ্দেক বলেন, চাপড়ার বাশারত করোনা আক্রান্ত হয়ে মেডিকেলে মারা যায়। প্রভাষক মাহবুবুল হক ডাবলু বলেন, উত্তর চাপড়ার বাক্কার ১০০% করোনা উপসর্গ নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন। কুল্যা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছেত আল হারুন চৌদুরী জানান, গুনাকরকাটি গ্রামের ব্যবসায়ী আঃ আলিম করোনায় আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। তার করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সে সনদ আছে। আ’লীগ নেতা ডাঃ মোশাররফ হোসেন জানান, খরিয়াটির পার্বতী রানী রাহা করোনা আক্রান্ত হয়ে সাতক্ষীরা হাসপাতাল ও পরে তালা হাসপাতালে যায়। ৩০ মে মারা গেলে তার শেষকৃত্যে গ্রামের মানুষ অংশ নেয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি ও তার সন্তানসহ ২/১ জন গভীর রাতে সমাধির ব্যবস্থা করেন।
এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদেষ্ণা সরকার, সেনেটারী ইন্সপেক্টর জি এম গোলাম মোস্তফা ও পরিসংখ্যান বিদ আঃ খালেক জানান, গত বছর ৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। এবছর কেউ মারা গিয়েছে এমন কোন তথ্য তাদের কাছে নেই।
করোনার ছোবল নিয়ে সচেতন মানুষ যখন নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়েছেন। যখন প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের অধিকতর সচেতনতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা গ্রহনের কথা, তখন করোনা আক্রান্তের সরেজমিন পরিস্থিতি উপলব্ধি এবং আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকলে এলাকা বা বাড়ি লকডাউন ও বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। তখন হাসপাতালে সঠিত তথ্য না থাকাই সংশয়ের অবকাশ ঘটে আশাশুনির অবস্থা না জানি কতটা ঝুঁকিতে পড়েছে!