করোনার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব কমেছে ১৩০ কোটি টাকা
বেনাপোল প্রতিনিধিঃ
করোনার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব কমেছে ১৩০ কোটি টাকা
মো.সাগর হোসেন,বেনাপোল প্রতিনিধি: দেশের সব চেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ধীরগতি নামাই রাজস্ব আয় কমেছে ১৩০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনায় ব্যাংকিং সময় কমসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাবের কারণে রাজস্ব কমেছে এ বন্দরে।
জানা গেছে, দেশের শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ও সরবরাহ সচল রাখতে সরকার বেনাপোল স্থলবন্দরের কার্যক্রম লকডাউনের আওতা মুক্ত রেখেছে। ফলে এ পথে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য সচল রয়েছে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আসে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে গত প্রায় দেড় বছর ধরে করোনার থাবায় দিন দিন রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়ছে বন্দরটিতে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশে শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় সরকার বন্দরকে সচল রেখেছেন এটা ভালো দিক। তবে তার খুব একটা সুফল ব্যবসায়ীরা পারছেন না।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমদানি ও রফতানি পণ্য খালাসের আগে সরকারের রাজস্ব পরিশোধের জন্য ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংক সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত খোলা থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের অর্থনৈতিক লেনদেন ও কাগজ পত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে পারছেন না। ফলে বাণিজ্যে ধীরগতি নেমে আসায় সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। সরকারের কাছে দুপুর ২টা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খোলা রাখার আহবান জানান তিনি।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বাংলাদেশে করোনার টাল মাতাল অবস্থা প্রতিবেশী দেশ ভারতে আরও ভয়াবহ। এমন অবস্থায় প্রায় দেড় বছর ধরে বাণিজ্যে মন্দা ভাব চলছে। বিশেষ করে ঘন ঘন লকডাউনে ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক বাণিজ্য করতে না পারায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসের আগ্রহ অনেকটা কমেছে। এছাড়া ভারতে করোনা পরিস্থিতি মহামারী অবস্থা হওয়ায় সেখান থেকেও নানান সংকটে সময় মত পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল হোসেন বলেন, সর্বশেষ গত রোববার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩৭৪ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক ও ৪০টি ট্রাক চ্যাচিজ বন্দরে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রফতানি হয়েছে ৬৭ ট্রাক। পূর্বেও তুলনায় বাণিজ্য কিছুটা কমেছে।
বেনাপোল সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার আকতার ফারুক জানান, গত মার্চ মাসে বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি-রফতানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিলে এসে আদায় হয় ৪৭০ কোটি টাকা। মার্চের যেয়ে এপ্রিলে রাজস্ব আয় কমেছে ১৩০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা তাকে জানিয়েছেন করোনা বিরূপ প্রভাব এ অবস্থার জন্য অনেকটা দায়ী।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায় ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এ রাজস্ব ঘাটতি দাড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।