আশাশুনির সহস্রধিক মানুষের বসবাসের একটি গ্রামে স্কুল নাই

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি :

অন্যান্য গ্রাম থেকে বেশ দূরে, নদী ও ঘের বেষ্টিত নির্জন একটি গ্রামের নাম বলাডাঙ্গা গ্রাম। গ্রামে সহ¯্রাধিক মানুষের বসবাস হলেও অনেক মৌলিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত গ্রামের মানুষ লেখাপড়া শিক্ষার জন্য কোন প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে নিদারুন কষ্টে জীবন যাপন করছেন। গ্রামের ছেলেমেয়েদের অধিকাংশই লেখাপড়া করার পরিবেশ না পেয়ে মুর্খ থেকে যাচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের একপাশে অবস্থিত অবহেলিত এই গ্রাম বলাডাঙ্গা গ্রাম। গ্রামে প্রায় ১২ শত মানুষের বসবাস। যাতয়াত ব্যবস্থার অভাবে মানুষ ১২ মাস খুব কষ্টে অন্য গ্রাম বা জেলা উপজেলায় যাতয়াত করে এসেছেন। সম্প্রতি ওয়াপদার উপর দিয়ে সড়ক নির্মান চলছে। এতে যাতয়াত ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক পেিরবশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এখানকার অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে (যাদের অদম্য স্পৃহা ও ক্ষমতা আছে) সাড়ে ৩ কিলমিঃ দূরে গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিংবা ৬ কিঃমিঃ দূরে কাকড়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের পাঠানোর চেষ্টা করে থাকেন। একেবার শিশুদের স্কুলে পাঠানো আদৌ সম্ভব হয়না। বর্ষাকালে আদৌ স্কুলে পাঠানো সম্ভব হয়না। গ্রামে একটি মসজিদ থাকলেও মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাও এখানে নেই।

গ্রামের বাচ্চাদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার অদম্য কামনা বাসনা বুকে ধারণ করে এক বছর আগে এগিয়ে আসেন শিক্ষানুরাগী আব্দুল কাদের গাজী। তিনি তার নিজের বাস ভবনের সামনের জমিতে স্থাপন করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কুঠির। এলাকার কিছু শিক্ষিত নারী পুুরুষকে নিয়ে গড়ে তোলেন পল্লীমা প্রিক্যাডেট স্কুল। শতাধিক শিশু ভর্তি হয় স্কুলে। বছরের শুরুতে সাগ্রহ সহকারে লেখাপড়ার কাজ শুরু করা হয়।

৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় দু’টি টিনসেড আধাপাকা ভবন। অফিস কক্ষসহ ৬টি রুমে ক্লাস পরিচালনা করা হতে থাকে। ৬জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কয়েক মাস ক্লাস চলার পর করোনা মহামারীর কারনে সরকারি নির্দেশে স্কুল পরিচালনা বন্ধ রাখা হয়। স্কুল ভবন নির্মানে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় বহন করেছেন প্রতিষ্ঠাতা আঃ কাদের গাজী। কাজ দেখে প্রধান শিক্ষক তার স্বামীর মাধ্যমে মালামাল ক্রয় করেন।

কাজ শেষে মালামাল ও মিস্ত্রী বাবদ দেড় লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষক বাকী আছে বলে হিসাব দিলে প্রতিষ্ঠাতা টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা নেন এবং এখনও সামান্য কিছু টাকা বাকী রয়েছে। প্রি ক্যাডেট স্কুল সরকারি নির্দেশ পেলেই চালু হবে যেখানে ঐ শিক্ষকরাই দায়িত্ব পালন করবেন। সাথে সাথে গ্রামে শিক্ষার স্থায়ী ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা মাথায় রেখে প্রতিষ্ঠাতা বিভিন্ন স্থানে কথা বলে চলেছেন।

প্রতিষ্ঠাতা আঃ কাদের গাজী জানান, তার এই জনস্বার্থের চিন্তাকে ঈর্ষার চোখে দেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় হলে পুরাতন শিক্ষকদের চাকুরী থাকবেনা ভেবে মিথ্যাচার, তার বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেছেন। তাকে ও স্কুলকেজড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক দাবী করে তিনি বলেন, প্রিক্যাডেট স্কুল আছে।

করোনার কারনে বন্ধ থাকা স্কুল খোলা হলে ঐ শিক্ষকরাই স্কুল চালাবেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে মাত্র। কোন কিছুই করা হয়নি। ভবিষ্যতে আলোর মুখ দেখবে কি না জানিনা। তবে এলাকার স্বার্থে এখানে সরকারি অনুদানে পরিচালিক স্কুল প্রতিষ্ঠা অবশ্যই প্রয়োজন। এজন্য তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

 

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)