ইভিএমের মাস্টার ট্রেইনার হচ্ছেন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা
নিউজ ডেস্কঃ
নতুন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সারাদেশের প্রায় হাজারখানেক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ইলেকশন কমিশন (ইসি)। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ইসি। এক্ষেত্রে ভোটযন্ত্রটি পরিচালনায় দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে কারিগরি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকের কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেন ইসি সচিব। সেখানে বলা হয়েছে, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও স্কুল-কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষ শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ার মধ্যেমে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে প্রস্তুত করা হবে।
সূত্রের তথ্যানুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ২০২০ সালের জুনে কিছু শিক্ষককে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ দেয়, যারা স্কুল-কলেজে আইসিটি বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। ওই সময় প্রতি উপজেলায় ১০ জন করে মোট ৫ হাজার ১৯০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ছিলেন না।
ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগের প্রশিক্ষণগুলো হয়েছে সীমিত পরিসরে। তখন কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষকরা ছিলেন না। এখন ইভিএম পরিচালনায় দক্ষ জনবলের জন্য মাস্টার ট্রেইনার গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে কারিগরি সম্পর্কিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজারের মতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। ইভিএমে ভোট নিতে হলে এসব ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতেই হবে। এক্ষেত্রে ইসির কর্মকর্তাদের দ্বারা এতো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য দেশের প্রতিটি অঞ্চলের পলিটেকনিক্যাল, ভোকেশনালের শিক্ষক এবং আইসিটি জ্ঞানসম্পন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাস্টার প্রশিক্ষক হিসেবে প্রস্তুত করা হবে। তারা পরবর্তীতে অন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দেবেন।
২০১০ সালে দেশে প্রথম ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের প্রচলন শুরু করা হয়। এটির প্রচলন শুরু করে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন। ওই সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা করে প্রায় এক হাজার ২৫০ ইভিএম তৈরি করা হয়। ওই কমিশন যন্ত্রটির সাহায্যে ভোট নিয়ে সফলও হয়েছিল।
পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন নতুন করে আরো উন্নত প্রযুক্তি ইভিএম তৈরির করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি থেকে ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে কেএম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন। এজন্য হাতে নেয়া হয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় নির্বাচন কমিশন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ইভিএম কিনেছে। চলতি বছর আরো ৩৪ হাজার মেশিন কেনার কথা রয়েছে।
নতুন ইভিএম মেশিনে ছয়টি সংসদীয় আসনের সাধারণ নির্বাচন, কয়েকটি উপ-নির্বাচন, বেশকিছু উপজেলা নির্বাচন ও কয়েকশ পৌরসভা নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের প্রায় হাজারখানেক নির্বাচন সম্পন্ন করেছে ইলেকশন কমিশন। এখন এটির ব্যবহার আরো বাড়িয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পুরোটাই ইভিএমে সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, নতুন ইভিএম অনেক উন্নতমানের। এ মেশিন হ্যাক করা যায় না। এজন্য ভবিষ্যতে সব নির্বাচনেই ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানো হবে।