মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলা
নিউজ ডেস্ক:
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে তাণ্ডবের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১০টায় আরিফ-উজ-জামান নামে ওয়ারীর এক ব্যক্তি হত্যা চেষ্টা ও বিস্ফোরক আইনসহ কয়েকটি ধারায় মামলাটি করেন।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা করার সময় আরিফের সঙ্গে থানায় উপস্থিত ছিলেন এম আর মিঠু ও ইমরান হোসেন তপু নামে আরও ২ ব্যবসায়ী।
মামলায় মামুনুল হককে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা লোকমান হাকিম, নাসির উদ্দিন মনির, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মাসুদুল করিম, মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, মাওলানা মুশতাকুন্নবী, মাওলানা হাফেজ মো. জোবায়ের এবং মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে মামুনুল হকের নির্দেশে ১৭ হেফাজত নেতার নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছোরা, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, লাঠিসোটাসহ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আরিফ-উজ-জামান গুরুতর আহত হন।
মামলার এজাহারে আরিফ-উজ-জামান লিখেছেন, ২৬ মার্চ দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মসজিদের বাইরে উত্তর গেটের সিঁড়িতে কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজতের উগ্র মৌলবাদী ব্যক্তির বিশাল জমায়েত দেখতে পান। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজত নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেশি-বিদেশি সরকার প্রধান ও নারী প্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিকে বানচাল করা এবং ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করেন। সেই লক্ষ্যে সেখানে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৬ মার্চ) বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে তাদের। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এটিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ইসলামি সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
এদিকে শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল হক।
মামুনুল হক অবরুদ্ধ এমন খবর শুনে সেখানে সন্ধ্যার পর জড়ো হতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা চালান। এতে রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা। এক পর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান হেফাজতের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা।