জামিনের চেষ্টা চালাচ্ছেন দেবহাটার মোস্ট ওয়ান্টেড সশস্ত্র জামায়ত নেতা আফগান জিয়া

নিজস্ব প্রতিনিধি:

২০১৩ সালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক আবু রায়হান হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজ হত্যা, গাজীরহাটে পুলিশের উপর হামলা ও নাশকতাসহ ১৬টি মামলার পলাতক আসামী জামায়তের সশস্ত্র ক্যাডার জিয়াউর রহমান জিয়া ওরফে আফগান জিয়া (৩৮) গোপনে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সে দেবহাটা উপজেলার নারিকেলি গ্রামের আব্দুল করিম সরদারের ছেলে।

স্থানীয় দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সখীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করে জিয়া। এরপর সে তার বড় ভাই জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সৌদি আরবে যায়। বয়স কম হওয়ায় সেখানে কান্নাকাটি করায় বাবা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন। এরপর পারুলিয়াতে সে তার বড় ভাই এর হার্ডওয়ারের ব্যবসা দেখাশোনা করতো। এ সময় সে স্থানীয় এক বিএনপি’ নেতার হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করে। পরে জামায়াত নেতাদের বয়ানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে জামায়াতে যোগদান করে। সহিংসতাকালীন সময় পর্যন্ত সে সখীপুর ইউনিয়ন জামায়তের সেক্রেটারী ছিল।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়কে ঘিরে জামায়াত- বিএনপির তাণ্ডব শুরু হলে দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে পুলিশের উপর হামলা, হত্যা, গাড়িতে আগুন, আওয়ামী লীগ অফিসে আগুনসহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনার নেতৃত্ব দিতো জিয়া। সে ছিল জামায়তের সশস্ত্র বাহিনীর দল নেতা। আওয়ামী লীগ নেতা আবু রায়হানকে পারুলিয়া বাসস্টাণ্ডে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় ৩৩ নং চার্জশীটভুক্ত আসামী জিয়া। তার বিরুদ্ধে তৎকালিন দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক তারক রায়সহ পুলিশের উপর হামলার মামলা রয়েছে। পারুলিয়ার ইউপি সদস্য শহীদুল্লাহ গাজীর অফিস পোড়ানো, সখীপুরের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল আজিজকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগ রয়েছে জিয়ার বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে এলাকায় জামায়াত বিরোধী অভিযান শুরু হলে সে পালিয়ে ভারতে যায়। কিছুদিন পর সে এলাকায় ফিরে নতুন করে নাশকতার পরিকল্পনা করে। পলাতক জীবনে সে বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠীর কাছ থেকে অস্ত্র চালানো ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর দীর্ঘদিন সে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়ত পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। সে অস্ত্র চালনায় সিদ্ধহস্ত হওয়ায় আফগানিস্থানে তালেবানদের কাছ থেকে প্রশিক্ষন নিয়েছিল বলে অনেকে মনে করে। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ কয়েক বছর পালিয়ে আত্মগোপনে ছিল সে। কিন্তু বিগত উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচন ও আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলীয় নেতাদের পরোক্ষ আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত বুঝে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি আফগান জিয়া তার আইনজীবী অ্যাড. হাফিজুর রহমানের পরামর্শে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দু’টি বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। এরপর সে বিচারিক হাকিম আদালত থেকে তিনটি মামলায় জামিন লাভ করে। বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালতে তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ সব মামলায় সে জামিন পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ জানান, জিয়াউর রহমান ওরফে আফগান জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে দেবহাটা থানার জিআর-১৪৫/১৩(সেশন-৪০৯/২১), একই থানার জিআর-৬৬/১৩(এসটিসি-৩৩৪/১৫), জিআর-১০৮/১৮(এসটিসি-৩৬৯/২০), জিআর-১১৮/১৮(এসটিসি-৩৭০/২০), দ্রুত বিচার-১০/১২, জিআর-৪৫/১৪(টিআর-২৮/১৮), জিআর-৪৫/১৪(এসটিসি-৪৮৯/১৫), সাতক্ষীরা সদর থানার জিআর-৫৩/১৫(এসটিসি ১৩৩/১৭), জিআর- ৫৬/১৩(টিআর-২৬/২০), জিআর-৬৮/১৩(টিআর-৫৮/২০), জিআর-৬৯/১৩ (টিআর-২২৯/১৮), জিআর-৬৬/১৩(টিআর-০৫/২০), জিআর-৫৩/১৫(টিআর-২০০/১৮ কালিগঞ্জ) মামলা বিচারাধীন। ২০১৩ সালের ১৯ মে দেবহাটা থানায় জিয়াউর রহমান ওরফে আফগান জিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ও ২৫(ঘ) দেবহাটা থানার জিআর-৬৬/১৩ / এসটিসি ৩৩৪/১৫ নং মামলায় জামিন শুনানীর জন্য বৃহষ্পতিবার দিন ধার্য ছিল। তবে তার পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. হাফিজুর রহমান জামিন শুনানীর জন্য সময়ের আবেদন করেছেন। অন্যদিকে আফগান জিয়ার জামিন যাতে না হয় সেজন্য তিনটি আদালতে দায়িত্বপ্রাপ্ত পিপিগণ সবধরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে আফগান জিয়াকে বৃহষ্পতিবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হলে তার সঙ্গে দেখা করতে জামায়তের কোন কোন নেতা এসেছে তা জানার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে খোজ নেওয়ার চেষ্টা করে তার আত্নীয় স্বজনরা।

তবে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, যে সব মামলায় সাতক্ষীরা আদালত থেকে জিয়ার জামিন বাতিল করা হবে ওইসব মামলা নিয়ে সে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)