‘চালপড়া’ খাইয়ে শিক্ষিকাকে চুরির অপবাদ-সাতক্ষীরায় তোলপাড়
নিজস্ব প্রতিনিধি:
‘চালপড়া’ খেয়ে তা গলায় আটকে যাওয়ার ঘটনায় একজন স্কুল শিক্ষিকাকে চুরির অপবাদ দেওয়াকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে এখনও তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন শিক্ষিকা চঞ্চলা রানী দাস। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
আশাশুনি উপজেলার সরাফপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষক আবু তাহেরের ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা শিক্ষকদের কক্ষ থেকে খোয়া যায় বলে অভিযোগ ওঠে।
প্রধান শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন এই টাকার হদিস না পেয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছ থেকে চালপড়া এনে তা সবাইকে খাওয়ানো হয়। বিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষক কর্মচারীর সবাই এই চালপড়া খান। তিনি বলেন শিক্ষিকা চঞ্চলা রানী দাস এই চালপড়া খেতে গিয়ে গলায় অস্বস্তি বোধ করছিলেন। এতে সবাই ধরে নেয় যে তিনিই টাকা চুরির জন্য দায়ী। অথচ চঞ্চলা রানী বলেন তিনি টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত নন। এমনকি ঘটনার দিন শিক্ষক আবু তাহের স্কুলে থাকা অবস্থায় তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক বাড়ি চলে যান। পরদিন জানতে পারেন তার টাকা খোয়া গেছে। চঞ্চলা রাণী জানান প্রধান শিক্ষক তাকেসহ অন্যদের এই চালপড়া খেতে বাধ্য করেছেন। অপরদিকে এই টাকা হারানোর দায়দায়িত্ব তার ওপর চাপানোর ঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। পরে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের পরামর্শ অনুযায়ী চঞ্চলা রানী আশাশুনি থানায় প্রধান শিক্ষকের নাম উলেখ করে একটি জিডি করেন। আশাশুনি থানার ওসি গোলাম কবির জানান বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষিকা চঞ্চলা জানান আজ বৃহস্পতিবার প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য সব শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা তার বাড়িতে যান এবং তাকে স্কুলে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি রাজ্যেশ^র দাস বলেন, ‘চালপড়া খাইয়ে কাউকে চুরির অপবাদ দেওয়া আইনসম্মত নয়’। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, টাকা চুরির অপবাদ দেওয়ায় চঞ্চলা রানী আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। তবে তার পরিবারের সদস্যদের নজরদারি এবং সান্তনার মুখে তিনি সে পথ থেকে ফিরে আসেন। তিনি জানান, ‘আমি সামাজিকভাবে অপমান বোধ করছি। চুরির অপবাদ নিয়ে স্কুলের শিক্ষকতা করার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছি। আমি এ ঘটনার বিচার দাবি করছি’।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনেছেন এবং এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘মান্ধাতার আমলের এই চালপড়া প্রক্রিয়ায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা আইনসম্মত নয়’।