বেনাপোলে ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীরা একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান

আঃজলিল,শার্শা যশোর:
ভৌগলিক সীমারেখা ভুলে, কেবলমাত্র ভাষার টানে দুই বাংলার মানুষ একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান।নেতারা হাতে হাত রেখে উর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল চেকপোস্ট এর ওপারে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে যশোর- কোলকাতা মহাসড়কে  এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। একই আকাশ একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক।
বেলা সাড়ে ১০ টায় বাংলাদেশ ভুখন্ডের বেনাপোল চেকপোষ্ট এলাকায় স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী স্বপন কুমার ভট্রচার্য ভারতের প্রবেশের আগে একুশ উদযাপন উপলক্ষে স্বাগত ভাষন দেন। তিনি বলেন স্বল্প পরিসরে হলেও আমরা দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা আজ একত্রে মিলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারছি। তাই সকলে স্বাস্থ বিধি মেনে এবং যাদের ভারতে প্রবেশের অনুমতি আছে শুধু মাত্র তারা প্রবেশ করবেন। এরপর বেলা ১১ টার সময় মন্ত্রী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মী সহ সকলে পেট্রাপোল প্রবেশ করে।আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালী বাংলাভাষী মানুষের পাশে।
ভাষা দিবস মিলিয়ে দিলো ‘এপার-ওপার’। কাটাতারের  বেড়া উপেক্ষা করে ভাষার দাবিতে আন্দোলনে শহীদদের সম্মিলিত শ্রদ্ধা জানালো ভারত-বাংলাদেশ। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে শহীদ বেদি ঢাকল ফুলের চাদরে।
এবার করোনা কালীন মহামরির কারনে  নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে দুই বাংলার ভাষা প্রেমীদের মিলন মেলা বসল পেট্রাপোল সীমান্তে। বেনাপোল চেকপোস্ট নোম্যান্সল্যান্ডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারো ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানানো হলো।
মিষ্টি বিতরণ, আলোচনা আর গানে গানে মাতোয়ারা হলো দুই বাংলার একই আকাশ একই বাতাস।
উভয় দেশের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির কথা। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে জড়ো হয়েছিল দুই বাংলার  ভাষাপ্রেমী মানুষ। নেতাদের কণ্ঠে ছিল ভবিষ্যতে আরো বড় করে এক মঞ্চে একুশসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রত্যাশা।
উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শত:স্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। দুই দেশের জাতীয় পতাকা, নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্লেকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। দুই বাংলার মানুষের এ মিলন মেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়।
প্রতি বছরই দুই বাংলার সীমান্তবর্তী এ অংশের বাসিন্দারা এক সঙ্গে মিলিত হয়ে দিবসটি পালন করেন। তখন দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী ওই স্থানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একে অপরকে আলিঙ্গন করে সকল ভেদাভেদ যেন ভুলে যায় কিছু সময়ের জন্য। তবে করোনা মহামারির কারনে এবার বাংলাদেশ থেকে স্বল্প পরিসরে প্রবেশের অনুমতি দেয় ভারত। যার ফলে অনেক ভাষাপ্রেমী ক্ষুব্ধ ও হয়। এছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশেও থাকে বাধা। বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৫ জন সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি মেলে।
এ সময়  দু’দেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একুশের এ মিলন মেলায় বাংলাদেশের পক্ষে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গন প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী স্বপন ভট্রচার্য,   যশোর-১ (শার্শা) আসনের এমপি  শেখ আফিল উদ্দিন, বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান, শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল।
শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ২১ উদযাপন কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, যুগ্মসম্পাদক ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাহবুব আলম লাবলু, বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ এনামুল হক মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নাসির উদ্দিন, সহসভাপতি আলীকদর সাগর প্রমুখ।
ভারতের পক্ষে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের প্রাক্তন বিধায়ক ও মেন্টর গোপাল শেঠ, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সহ সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ গোপাল ব্যানার্জী, বনগাঁ লোকসভার প্রাক্তন সংসদ শ্রীমত্তা মমতা ঠাকুর, বনগা দক্ষিণ বিধায়ক শ্রী সুরঞ্জিত বিশেষ , গাইঘাটা বিধায়ক শ্রী পুলেন বিহারি রায়, বনগা পৌরসভা ও প্রাক্তন পৌরসভা এবং প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য শ্রীমত্তা কৃষ্ণা রায়, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রী গোবিন্দ দাস, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রী প্রদীপ বিশ্বাস গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রী ধ্যানেশ গুহ, বনগা পঞ্চয়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রী সৌমেন দত্ত, ছয়ঘরিয়া প্রাক্তন পরিষদের প্রধাণ প্রসেনজিৎ ঘোষ, দমদম পৌরসভা প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য শ্রীমতি রিংকু দে দত্ত, আকাইপুর  প্রধান শ্রী সুভাস সাহা।
ভারতের আরো উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শ্রী বিভাস রায় চৌধূরী, সাহিত্যিক শ্রী স্বপন চক্রবর্তী, বনগাঁ জেলা পুলিশ আইপিএস পুলিশ সুপার শ্রী তরণি হালদার, বনগা মহাকুমা শাসক শ্রী প্রেম বিভাস কাঁশারী, বনগাঁ মহকুমা পুলিশ আধিকারি শ্রী অশেষ বিক্রম দস্তিদার, আইআরএস ডেপুটি কমিশনার অব কাস্টম শ্রী শিবসাগর, ১৭৯ বিএন.বিএসএফ অ্যাসিস্ট্যান্ট কোম্পানী কমান্ড্যান্ট শ্রী পারভেস ধনকর, পেট্টাপোল মুখ্য অভিবাসন আধিকারি শ্রী টি.কে বিশ্বাস, ১৫৮ বিএন, বিএসএফ অ্যাসিস্ট্যান্ট কোম্পানী কমান্ড্যান্ট শ্রী সঞ্জয় রাউত, বনগা থানার আইসি শ্রী সূর্য শেখর মন্ডোল, পেট্রাপোল থানা ভারপ্রাপ্ত আধিকারি শ্রী কার্ত্তিক অধিকারি প্রমুখ।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)