আশাশুনির নাকতাড়া কালী মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় শুরু করা হয়েছে প্রাচীর নির্মাণ কাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের পবিত্রতা রক্ষায় শুরু করা হয়েছে প্রাচীর নির্মাণ কাজ। শুক্রবার সকালে মন্দির পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে এ কাজ শুরু করা হয়।
নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধর্মদাস মিস্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক তপন মণ্ডল জানান, ১৬৯৬ সালে জমিদার যতীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী সাবেক চারটি খয়িানে ও একটি দাগে ২৪ শতক জমি দান করে তাতে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া , বুড়োখারাটি, লাঙ্গলদাড়িয়া, গাজীপুর, কাঁকড়াবুনিয়া, মহিষকুড়, কলিমাখালি, ঢালীরচক, বিলবকচর, বিলথানাঘাটা, বিল বুড়োখারাটি, বিলমহিষ্কুড়সহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের হিন্দুরা এ মন্দিরে প্রতি বাংলা সনের চৈত্রমাসের শেষ মঙ্গলবার কালীপুজা উপলক্ষ্যে আনন্দে মেতে ওঠে। পুজা মূলত পরিণত হয় সর্বধর্মেরমিলন মেলায়। এ ছাড়াও সেখানে হরিপুজা, শীতলা পুজা, নামযজ্ঞ, বিশ্বকর্মা পুজা, মণষা পুজা ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার শত্র“ সম্পত্তি আইনপাস করায় ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসায় নাকতাড়াসহ এলাকার বর্ধিষ্ণু হিন্দুরা এক শ্রেণীর মৌলবাদি সংখ্যাগুরুদের অত্যাচারের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। ফলে তাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, বাস্তুভিটা, মন্দির, শ্মশান জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বেদখল হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের জমি খাস করে বা পেরিফেরি করে তার উপর গড়ে ওঠে হাট, বাজার, খেলার মাঠ ও রাস্তা। জমি উদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদী মামলার খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। এক বিঘা জমি উদ্ধারে খরচ হয়ে যায় আরো এক বিঘা জমির দাম।
তারা আরো বলেন, কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের নামে রেকডীয় জমি ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি ০২/২০১০ নং পেরিফেরি কেসের মাধ্যমে ২৪ শতক জমি খাস করা হয়েছে জানতে পেরে তৎকালিন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল ২০১১ সালের ২১ মার্চ বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তার নামে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে মামলা(দেঃ ১৩৩/১১) করেন। স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক প্রায় আট বছর পর ২০১৯ সালের ১৭ জুন আশাশুনি সহকারি জজ আদালতের বিচারক সাবরিনা চৌধুরী কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের জমি পেরিফেরি করা হয়েছে বলে উলেখ করেন। একই সাথে ওই জমি দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে উলেখ করে মন্দিরের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১১ সালে মন্দিরের জমি জবর দখল করে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন খালেক সরদার। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরদিন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের সহায়তায় বিরোধপূর্ণ জমির পূর্ব পাশে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। বাধা দেওয়ায় মোটর সাইকেলে চালক আশাশুনির ফেরদৌস, নাকতাড়া এলাকার মতলেব, আলমগীর হোসেন ও জুলফিকারসহ কয়েকজন মন্দির ভাঙচুর করার হুমকি দেন। পরবর্তীতে ওই ঘরের পাশে খোলা জায়গায় প্রসাবখানা বানিয়ে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা অব্যহত থাকে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। এমনকি ২০১৭ সালে চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল মন্দিরের জমির উপর দিয়েই রেডিয়েন্স এণ্ড ফ্রেণ্ডশিপ ক্লাবে যাওয়ার জন্য ইট সোলিং রাস্তা বানিয়ে দেন। একপর্যায়ে আদালতের রায় অনুযায়ি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি হিন্দু সংগঠণের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্দির সংস্কারের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর অবৈধ স্থাপনা অপসারন ও মন্দিরের সামনের অংশে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল(দেঃ আপিল ১১৭/১৯) করলে গত বছরের ১৩ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আপিল না’মঞ্জুর করে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় ও ডিক্রী বহুল রাখেন। আদেশের কপি হাতে পাওয়ার কয়েকদিন পর শুক্রবার থেকে মন্দিরের পশ্চিম পাশে স্থানীয়দের সহায়তায় প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধর্মদাস মিস্ত্রী,সাধারণ সম্পাদক তপন মণ্ডল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, রণজিৎ বৈদ্য, গোষ্ঠ বিহারী সরকার, সঞ্জয় সরদার, সমীর কুমার মণ্ডল, ব্রজেন্দ্রনাথ মণ্ডল, গৌরপদ ঢালী, বিশ্বনাথ সরকার, আশুতোষ মণ্ডল, রাজেন্দ্রনাথ স্বর্ণকার প্রমুখ।