কলারোয়া পৌর নির্বাচনে আবারও ভোটের মাঠে সরব তৃতীয় লিঙ্গের দিথী খাতুন
কামরুল হাসানঃ
কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন সাতক্ষীরা জেলার প্রথম কোন তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী। যার নাম দিথী খাতুন।
আগামী ৩০ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে তিনি সমানতালে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। প্রচার-প্রচারণায় অন্য প্রার্থীর চেয়ে কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী তিনি। তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী হওয়ায় তাকে নিয়ে সাতক্ষীরা জেলাব্যাপী বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। কলারোয়া পৌরসভার সংরক্ষিত আসন ৩ এ (৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড) তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ওই ৩টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৮৫২। গত নির্বাচনে চুড়ি প্রতীক থাকলেও এবার পেয়েছেন আংটি প্রতীক। উল্লেখ্য, তিনি গত ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনে চুড়ি প্রতীক নিয়ে মাত্র ১৩ ভোটে পরাজিত হন। তিনি বলেন, ‘মনে রাখবেন কেউ কারো অধিকার দেয় না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। নির্বাচনে জিতলে আমি তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হবো। সব সময় থাকব গরিব আর অবহেলিত মানুষের পক্ষে।’
দিথী খাতুন জানালেন, ‘কিছু মানুষ তাকে নিয়ে সমালোচনা করলেও ভালবাসাও কম পাচ্ছেন না তিনি। এলাকার গরিব অবহেলিত মানুষই আমাকে বলেছেন নির্বাচনে অংশ নিতে। আর তাদের এই শক্তি নিয়ে আমি লড়াই করতে চাই। সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে চাই।’
দিথীর ভোটযুদ্ধের সঙ্গী অপু, নদী, নুপুর, স্বপ্না ও পায়েল, প্রীতি জিন্তা, অর্চনা ও পারুল জানান, তারা দিথীর পক্ষে কাজ করছেন, সব ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। দিথী প্রার্থী হওয়ায় তারা সকলে বেশ আনন্দিত। পার্শ্ববর্তী জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার তৃতীয় লিঙ্গের সাথীরা সম্মিলিতভাবে তার পক্ষে কাজ করতে কলারোয়ায় অবস্থান করছেন।
এলাকার সাধারণ ভোটাররাও তাকে নিয়ে ভাবছেন। সাধারণ মানুষ তার জন্য কাজ করছেন।
এই সংরক্ষিত আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা হলেন: জবাফুল প্রতীকে হাসিনা আক্তার, আনারস প্রতীকে মোছা: শাহানাজ খাতুন, চশমা প্রতীকে রূপা খাতুন ও টেলিফোন প্রতীকে জাহানারা খাতুন। দিথী খাতুনের আশা, ভোটারদের সমর্থনে তিনি এবার নির্বাচনী বৈতরণী পেরিয়ে যাবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, তার পৈত্রিক নিবাস ছিলো যশোর সিটি কলেজ এলাকায়। বাবার নাম আব্দুল হামিদ মিয়া।
তারা ৩ ভাই ও ১ বোন। ভাই ৩ জনের কোনো সমস্যা নেই। কেবলমাত্র তার পরিবারে তিনিই বিশেষ সম্প্রদায়ের। অন্যরা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন বলে তিনি জানান।
তিনি একটু বড় হওয়ার পরে পরিবার ছেড়ে চলে আসেন ও মিশে যান তার গোত্রীয় অন্যদের সাথে। এভাবে চলতে থাকে পথ পরিক্রমা। অবশেষে তিনি স্থায়ীভাবে মাথাগোঁজার ঠাই গড়েন কলারোয়ার এই মির্জাপুর গ্রামে। এখানে জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে শুরু করেন বসবাস। এখানেই নিজ গোত্রীয় মানুষের সাথে মিলে চলতে থাকেন তিনি।
সাধারণ ভোটারদের প্রত্যাশা, দিথী বেগমের জয়লাভের মধ্যদিয়ে সমাজের অধিকার বঞ্চিত মানুষেরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। সমাজ থেকে দূর হবে মানুষে মানুষে বৈষম্য, ফিরে পাবে অধিকার।