তালায় ৩৮ বছর পরে তারই হাতে লাগানো গাছের ফল ও পুকুরের মাছ নিয়ে হাজির হলেন ইউএনও ইকবাল হোসেন

জহর হাসান সাগর  
সাতক্ষীরা জেলা   তালা উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের মালী বৃদ্ধ ও অসুস্থ তারাপদ দাস। যৌবনের ৩০ বছর পার করছেন তালা উপজেলা পরিষদে। নিজ হাতে লাগিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চত্বরে শতাধিক ফল ও বনজ গাছগাছালি। সরকারি পুকুরে নিজের হাতে ছেড়েছেন অনেক  মাছ। তবে তার ভাগ্যে জোটেনি সেই গাছের কোন ফল ও পুকুরের মাছ। ২০১২ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে চাকুরি থেকে অবসরে চলে যান তারাপদ। সেই থেকে তার খোঁজ রাখেনি কেউ। অবশেষে নিজের লাগানো গাছের ফল ও পুকুরের মাছ ভাগ্যে জুটল তার। ইউএনও মো. ইকবাল হোসেনকে বাড়িতে পেয়েই কাঁদলেন তারাপদ দাস।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের মহান্দি গ্রামে তারাপদ দাসের বাড়িতে হাজির হন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন। সঙ্গে নিয়ে যান উপজেলা পরিষদের সরকারি পুকুরের মাছ, পরিষদ চত্বরে তারাপদ দাসের হাতে লাগানো নারকেল গাছের ফল ও শীতবস্ত্র কম্বল। খোঁজখবর নেন তার শারীরিক অবস্থার।
তারাপদ দাসের ছেলে সাগর দাস জানান, ইউএনও স্যার বাড়িতে এসে বাবার খোঁজখবর নিয়েছেন। সরকারি মাছ, শীতবস্ত্র, নারকেল ও নগদ টাকা সহায়তা করেছেন। ঘোষনা করে গেছেন এখন থেকে বাবাকে প্রতিমাসে সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে। বাবা ৩০ বছর ইউএনও অফিসের মালী পদে চাকুরি করেছেন। চাকুরি ছেড়ে দেওয়ার পর কখনো কেউ খোঁজ নেননি। দূর্ঘটনার পর ২০১২ সালে চাকুরি থেকে অব্যাহতি নেন। বয়সও ৮০ বছর পার হয়েছে বাবার। এখন বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন।
নিজের হাতে লাগানো নারকেল গাছের ফল পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন তারাপদ দাস। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি চাকুনি ছেড়ে আসার পর থেকে কোন স্যার(ইউএনও)  কেউ খোঁজ নেয়নি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন জানান, শনিবার সকালে খুব ভোরে তারপদ দাস আমার সরকারি বাসায় গিয়েছিলেন একটি কম্বলের জন্য। তখন আমি জানতাম না যে এই তারাপদ বাবুই ছিলেন উপজেলা পরিষদের মালী। তিনি ৩০ বছর সেখানে চাকুরি করেছেন। নিজে হাতে উপজেলা পরিষদের শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়েছেন। পুকুরে মাছ ছেড়েছেন। তবে সেটি তিনি কখনো ভোগ করতে পারেনিনি। ঘটনাটি জানার পরই সহমর্মিতা নিয়ে তার বাড়িতে গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, কিছু ফল, মাছ ও নগদ কিছু টাকা উপহার দিয়েছি। এছাড়া রেজুলেশান করে এখন থেকে উপজেলা পরিষদ থেকে প্রতিমাসে তার জন্য নগদ কিছু সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। যেটি তিনি যতদিন জীবিত থাকবেন বাড়িতে বসে পাবেন। আমাদের সারাদেশের উপজেলা পরিষদে এমন অনেক মানবিক ও স্পর্শকাতর গল্প রয়েছে। যিনি করেন বা গড়েন তিনি ভোগ করতে পারেন না। তবে সেটি তার প্রাপ্য। আমি চাই সকল কর্মকর্তারা মানবিক হয়ে এসব মানুষদের খোঁজ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবেন।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)