যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার তৃতীয় আরেকটি ধরণ
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যে মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন একটি ধরণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই সেখানে ভাইরাসটির তৃতীয় আরেকটি ধরণ শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়া এই ভাইরাসটির উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, নতুন বৈশিষ্ট্যের এই করোনাভাইরাসে দুই জন আক্রান্ত হয়েছেন। লন্ডন এবং উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের আক্রান্ত ওই দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করে এসেছে এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন।
এ ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
গত ১৪ দিনে যারা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণ করেছেন কিংবা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের অতি সত্ত্বর কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এরইমধ্যে এই ভাইরাসটি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোয়াইলি ম্যাখিজে সতর্ক করে বলেন, ‘তরুণ, আগে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন এমন ব্যক্তিরাও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।’
তিনি বলেন, ‘এইডস মহামারির শুরুর দিকে যে অবস্থা পার করেছি, সেই একই অবস্থা আবার পার করতে পারবো না।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসের এই বৈশিষ্ট্য বা ভ্যারিয়ান্টটি ‘দ্রুত ছড়ায়’ এবং দেশটির অনেক এলাকায় এর সংক্রমণও বেশি দেখা যাচ্ছে।
এই ভ্যারিয়ান্টটি নিয়ে এখনো বিশ্লেষণ চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে এটি অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবারই প্রথমবারের মতো এটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করা হয়।
নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটির সাথে এর আগে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন বৈশিষ্ট্যের আরেকটি ভাইরাসের সাথে কিছুটা মিল রয়েছে। যদিও ভাইরাসটি দুটি আলাদা ভাবে বিবর্তিত হয়েছে।
দুটি ভাইরাসেরই একটি নির্দিষ্ট অংশে এন ফাইভ জিরো ওয়ান ওয়াই (N501Y) নামে একটি পরিবর্তন হয়েছে। ওই অংশটি দিয়ে মানুষের দেহের কোষকে আক্রান্ত করে ভাইরাসগুলো।
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক নিল ফার্গুসন বলেন, ‘আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি যে ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ থাকা উচিত সেটি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার ভাইরাসটি।’
‘এই ভাইরাসটির বিস্ফোরকের মতো সংক্রমণের বিস্ময়কর রিপোর্ট রয়েছে এবং এর সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি হারও অত্যধিক।’
ডাউনিং স্ট্রিটে এক সংবাদ সম্মেলনে হ্যানকক বলেন, নতুন ভ্যারিয়ান্টটি ‘খুবই উদ্বেগজনক’ এবং যাদের কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের ‘অন্য যেকোন ব্যক্তির সাথে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।’
একই সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন যে, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ হিসেবে লাখ লাখ মানুষকে ক্রিসমাসের পরের দিন বা বক্সিং ডে থেকেই চতুর্থ পর্যায় বা সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিধি-নিষেধের আওতায় আনা হবে।
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ডা. সুসান হপকিন্স বলেন, ‘দুটি ভাইরাসই মনে হচ্ছে যে তারা অত্যন্ত সংক্রমণশীল।’
কিন্তু তিনি জানান যে, তারা এখনো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ভাইরাসটির ভ্যারিয়ান্ট সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন।
তিনি বলেন, তিনি ‘বেশ নিশ্চিত’ যে কোয়ারেন্টিন এবং ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপের মাধ্যমে নতুন ভ্যারিয়ান্টটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো সম্ভব।
ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক লরেন্স ইয়াং বলেন, ‘সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে যে বিধি-নিষেধ (হাত, মুখ, অন্যান্য স্থান বিষয়ক) রয়েছে তা নতুন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়াও ঠেকাবে।’
সূত্র: বিবিসি