আজ পয়লা পৌষ: বর্ষপঞ্জিকায় এলো শীত
নিউজ ডেস্ক:
প্রকৃতিতে শীত এসেছে বহু আগেই। তবে বর্ষপঞ্জিকায় আজই পৌষের প্রথম দিন। বঙ্গাব্দ ১৪২৭-এর শীত ঋতুর প্রথম দিন!
শিশিরভেজা নতুন সকালে আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো। গতকাল বিদায় নিয়েছে হেমন্ত। ঋতুর পরিবর্তনে পৌষ আর মাঘ—দু’মাস শীতকাল। পঞ্জিকার হিসাবে আজ শীতের শুরু হলেও ক’দিন ধরেই হিমেল হাওয়ার ঝাপটা আর ঘন কুয়াশা জানান দিচ্ছিল শীতের আগমনীবার্তা। প্রবল শীত থেকে জীবন বাঁচাতে অতিথি পাখিরা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে তারও আগে থেকে।
পৌষের শুরু থেকেই কুয়াশার হালকা স্তর গভীর ও ধূমায়িত হয়ে আচ্ছন্ন করে তোলে দিকচক্রবাল। রাতভর ঝরে পড়া শিশিরে ভিজে ওঠে ঘাস, লতাপাতা, ঘরবাড়ির টিনের ছাউিন। ঘাসের ডগায়, পাতার কিনারে জমে থাকা স্বচ্ছ শিশিরবিন্দুতে ভোরের সোনালি রোদের স্পর্শ ছড়িয়ে দেয় মনোহর দ্যুতি। মুক্তোদানা বা হীরার কুচির সঙ্গে লোকে তার শোভার তুলনা করে আসছে বহুকাল থেকে। আর শীতের এই রোদ কতই না আদরণীয়—‘মিঠে রোদ’, ‘সোনা রোদ’ ভালোবেসে দেয়া এমন সব তার নাম।
শীত নিয়ে নানা বন্দনা রয়েছে বাংলা সাহিত্যে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আম্লকির এই ডালে ডালে…’, ‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে চলে আয় আয় আয়…’।
শীতকালের শাকসবজিতে খেত ভরে যায়। লালশাক, পালংশাক, শিম, বরবটি, লাউ, টমেটো, গাজর, শালগম এবং মুলাসহ নানা রকম সবজি শোভাবর্ধন করে, যা আমাদের খাবার হিসেবে আকৃষ্ট করে। তাছাড়া পিঠাপুলি, অতিথি আপ্যায়ন, যাত্রাপালায় গ্রামীণ জনপদে নির্ভার আনন্দের তরঙ্গ বয়ে যায়।
শীতের বিবর্ণ পরিবেশে নানা ফুল বর্ণিল রঙ ছড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে আদায় করে নেয় বিশেষ সমাদর। সরিষাফুলের হলুদ খেত আর মৌমাছির গুঞ্জনের দৃশ্য না দেখলে এই দৃশ্য বোঝানো যাবে না। আর শীতকালের রং-বেরঙের ফুল গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গোলাপ প্রভৃতি শোভাবর্ধন করে। ফুলের দোকানগুলো বাহারি ফুলে ভরে যায়। এ সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি বরণ করতে ফুলের দোকানগুলোতে নানা রকম ফুলের ডালি, তোড়া ও মালাসহ সুসজ্জিত ফুলের উপকরণ বিক্রির হিড়িক পড়ে যায়।
বাংলাদেশে তুষার পড়ে না। তবু শীতের শুষ্ক রুক্ষতা মৃত্যুর সঙ্গে তুলনীয়। গাছে গাছে মলিন, বিবর্ণ হয়ে আসে পাতা। ফেটে ঝরে পড়ে বাকল। অথচ এই রুক্ষ প্রকৃতিই ফুটিয়ে তোলে রক্তলাল গোলাপ, গাঁদা, ডালিয়া, মল্লিকাদের। এত রঙিন ফুলে ভরা মালঞ্চ শীত ছাড়া কার আছে আর!