সায়মা ওয়াজেদ পুতুল: স্বীয় কর্মে বিশ্ব স্বীকৃত সফল নারী
ডেস্ক নিউজ:
সমাজে যাদের ‘বোঝা’, ‘বিরক্তিকর’ মনে করে বাঁকা দৃষ্টিতে এড়িয়ে যাওয়া হয় সেই প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা হয়েও ভোগ-বিলাসে না মেতে আর্ত-মানবতার সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও সৃষ্টিশীলতায় অটিজম মোকাবিলায় অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বীয় কর্মে সমাজের অবহেলিত মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে অবদান রাখায় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এই গুণী সদস্য।
ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, সমাজের অবহেলিতদের প্রতি নিদারুণ ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ থেকে অটিজম নিয়ে কাজ শুরু করেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তার বৃহত্তর প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবিলা, জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বুধবার ছিল সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বরে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। তার বাবা বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, মা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের অটিজম বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়ায়। প্রথমে নিজ দেশ বাংলাদেশে এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তিনি কাজ শুরু করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।
তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তা দিতে অবকাঠামো গড়ার কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যার উদ্যোগেই অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
২০০৮ সালের পর থেকে সায়মা ওয়াজেদ অটিজম সমস্যার উন্নয়নে কাজ করার জন্য অনেক অ্যাওয়ার্ড পান। অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে। ফ্লোরিডার মায়ামিতে ব্যারি ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সায়মা ওয়াজেদ ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।