গ্রামীণ অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা মুক্তা চাষ
নিউজ ডেস্ক:
তুলনামূলকভাবে সহজ ও লাভ বেশি হওয়ায় মুক্তা চাষের প্রতি ঝুঁকছেন গ্রামের অসংখ্য মানুষ। এতে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে। আগ্রহী কোনো ব্যক্তি সহজেই প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তা চাষ করে লাভবান হতে পারেন।
তেমনই একজন বরগুনা সদর উপজেলার লতাবাড়িয়া গ্রামে ব্রাইট এ্যাগ্রো কৃষি খামারের মালিক মো. নুরুল ইসলাম। অবসরপ্রাপ্ত এ সরকারি কর্মকর্তার মুক্তা চাষের সফলতার গল্প এরই মধ্যে উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০১৯ সালে ব্রাইট এ্যাগ্রো ফার্মে মাছের পাশাপাশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প শুরু করেন তিনি।
তার মতে, মাছ রফতানিতে প্রসেসিংসহ নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। কিন্তু মুক্তার ক্ষেত্রে সেরকম কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। পুকুর বা জলাশয়ে এক সঙ্গে মুক্তা এবং মাছ চাষ করে যেকোনো পরিবার অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে।
বর্তমানে নুরুল ইসলামের মুক্তা চাষের এই প্রকল্প দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ খামারে আসছেন। আগ্রহীদের ব্রাইট এ্যাগ্রোর পক্ষ থেকে মুক্তা চাষের পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
মুক্তা চাষ সম্পর্কে জানা যায়, মুক্তা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে মান সম্পন্ন ঝিনুক প্রাকৃতিক জলাধার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এর আগে প্রস্তুতকৃত ইমেজ, মান্ডেল টিস্যুর পাশে স্থাপন করে প্রথম ৪৫ দিনের জন্য আটকানো নেটে রাখতে হয়।
কেননা সুযোগ পেলে ঝিনুক ফরেন বড়ি শরীর থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে। ৪৫ দিনের মধ্যে স্থাপিত ইমেজটি দেহের খোলসের সঙ্গে আটকে যায়। তখন আর ফেলতে পারে না। ৪৫ দিন পরে নেটের ভেতরে মাটির প্রশস্ত বাসন জাতীয় পাত্রের ওপর আটকিয়ে রেখে এবং ঝিনুকের খাদ্য হিসেবে প্লাংটন উৎপাদনের জন্য গাবের প্রয়োগ করতে হয়। এ পদ্ধতিতে ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মুক্তা আহরণের উপযুক্ত হয়।
এদিকে গোলাকার মুক্তা উৎপাদনের জন্য অন্য ঝিনুকের ম্যানেডল টিসু নিয়ে ছাটে ছাটে টুকরো করে মুক্তা উৎপাদনের বিশেষ থলিতে স্থাপন করতে হয়। এতে ৩ বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ মুক্তা উৎপাদিত হয়। মুক্তা জুয়েলারি, ওষুধ শিল্প, কসমেটিকস ও পেইন্টস ফরমুলেশনে ব্যবহৃত হয়।
জানতে চাইলে মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মুক্তা চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। প্রতিটি ঝিনুক থেকে ৬টি মুক্তা উৎপাদিত হয় প্রায়। বর্তমানে ব্রাইট এ্যাগ্রোতে ৩ হাজারের বেশি মুক্তা উৎপাদিত হচ্ছে। গ্রীসে অবস্থানরত বাঙালিরা মুক্তা সংগ্রহের ব্যাপারে যোগাযোগ করছেন।
নুরুল ইসলামের মুক্তা চাষ দেখে এলাকার অনেকেই মুক্তা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বরগুনা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আল আমিন ও সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের হাওড় ও বিলে সামান্য পরিমাণে মুক্তা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। মুক্তা চাষের প্রসার ঘটলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
তারা আরো বলেন, গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে মুক্তা চাষ একটি বিরাট সাফল্য বয়ে আনতে পারে। আমরা নিজেরাও মুক্তা চাষ করতে আগ্রহী। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা সম্ভব।
বরগুনার ডিসি মো. মোস্তাইন বিল্লাহ এরই মধ্যে নুরুল ইসলামের মুক্তা চাষ প্রকল্প পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, উপকূলীয় এলাকায় নুরুল ইসলামের মতো উদ্যোক্তার প্রয়োজন। বেকার যুবকরা একটু উদ্যোগী হলে মুক্তা চাষ প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।