ম্যারাডোনা: ফুটবলের জন্যই যার জন্ম

স্পোর্টস ডেস্ক :

ফুটবল লিজেন্ড দিয়েগো ম্যারাডোনা। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। সীমাহীন ভালোবাসায় পূর্ণ ও বাঁধনহারা এক জীবন তার। সব মায়া কাটিয়ে অবশেষে বুধবার নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঈশ্বরের কাছে চলে গেলেন ফুটবলের এই ঈশ্বর।

আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আইরেসের লানুস ১৯৬০ সালে জন্ম নেন ম্যারাডোনা। দরিদ্র পরিবারে বেশ কষ্টেই কেটেছে তার শৈশব। পড়াশোনা নয়, ফুটবলের প্রতিই ছিল তার নেশা। সারাক্ষণ বল নিয়ে পড়ে থাকতেন। এক কথায় বলা যায় ফুটবলের জন্যই যেন জন্ম হয়েছিলো ম্যারাডোনার।

১০ বছর বয়সে এস্ত্রেয়া রোজার হয়ে খেলতে নামেন মাঠে। কিন্তু তার ফুটবলের ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিলো ১৯৭৬ স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করে। এরপরে ১৯৭৭ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মাঠে নামেন ফুটবলের এই ঈশ্বর। তখন তার বয়স ১৬ বছর ১২০ দিন। এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সাফল্য যেন তার নিত্যসঙ্গী।

বোকাকে আর্জেন্টাইন শিরোপা জিতিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সেই কাতালান জায়ান্ট বার্সেলোনায় পাড়ি জমান ম্যারাডোনা। এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনাকে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জেতান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার প্রতিভা আর তার উল্টো দিকটা প্রকাশ পায়।

ইংলিশদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে হাত দিয়ে গোল করেন তিনি, যেটাকে তিনি নিজেই ‘হ্যান্ড অব গড’ বলে অভিহিত করেন। একই ম্যাচে ঝড়ের গতিতে ৬০ মিটার দূর থেকে দৌড়ে ইংলিশদের পাঁচ ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটি করেন। ২০০২ সালে ফিফা ডট কম এর ভোটাররা গোলটিকে শতাব্দীর সেরা গোল হিসাবে নির্বাচিত করে।

১৯৯০ বিশ্বকাপে দুর্বল দল নিয়েও ফাইনালে উঠে যায় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কেঁদে ভাসিয়ে দেন ম্যারাডোনা।

এক বছর পর ১৯৯১ সালে ইতালিতে ড্রাগ টেস্টে কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি। শেষ হয়ে যায় নাপোলি ক্যারিয়ার। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে ইফিড্রিন টেস্টে ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর সেভিয়ায় এক মৌসুম শেষে ইউরোপ ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ২১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৬৭৯ ম্যাচে ৩৪৬ গোল করেছেন।

তবে কোচ হিসেবে ম্যারাডোনার সাফল্য কখনোই তার খেলোয়াড়ি জীবনের ধারেকাছে যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নভেম্বরে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান তিনি। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের পর দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাকে।

কোচ হিসেবে হোক কিংবা খেলোয়াড়, ম্যারাডোনা স্বশরীরে বিদায় নিয়েছে পৃথিবী থেকে কিন্তৃ তার স্বত্তাটা আজীবন বেঁচে থাকবে প্রতিটা ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)