গণধর্ষণ মামলা তুলে না নেয়ায় ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর হাত-পা বেঁধে নির্যাতন: তিন জনের নামে থানায় মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে গণধর্ষনের মামলা তুলে না নেওয়ায় ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে মুমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রাখার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। শুক্রবার রাতে নির্যাতিতা ওই নারীর ভাই বাদি হয়ে তিন জনের নামে শ্যামনগর থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে সুকুমার মন্ডল (৩৮), একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল (৩৯) ও ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪০)।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মন্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের মৎস্য ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। ওই দিন তারা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে হুজুর ডেকে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে দেয়। এরপর তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে কিছুদিন সময় পার করার একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। এরপর ওই বছরের ১১ জুন সকালে খুলনার গল্লামারির একটি বাড়িতে তাকে আটকে রেখে গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে। এতে ওই নারী রাজী না হওয়ায় ছিদ্দিক, গোলাম রসুল ও সুকুমার তিন জনে মিলে তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ায় ওই বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে তারা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নেয়ার জন্য তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল। মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, নির্যাতিতার ছোট ভাই গত মঙ্গলবার রাতে (১৭ নভেম্বর) তার অসুস্থ মায়ের জন্য শ্যামনগর থেকে ঔষধ কিনে বাড়ির আসার সময় অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ তার মামলার আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিক, সুকুমার মন্ডল ও গোলাম রসুল তার গলায় দা ধরে পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে নিয়ে যায়। তারা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের পর তার বাম হাতে দু’টি বিষাক্ত ইনজেকশান পুশ করে। এরপর একটি ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে তুলে তাকে সোয়ালিয়াা ব্রীজের পাশে নিয়ে যেয়ে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ব্রীজের পাশে ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে তার স্বজনরা মঙ্গলবার দিবাগত রাত দু’টোর সোয়ালিয়া ব্রীজের পাশ থেকে মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। বর্তমানে সে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, শুক্রবার রাতেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।