সাতক্ষীরায় অগ্রগতি সংস্থার আয়োজনে মানব পাচার প্রতিরোধে সংলাপ

স্টাফ রিপোর্টার ::

সাতক্ষীরায় অগ্রগতি সংস্থার আয়োজনে রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১১টায় ৫ নং শিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আশ্বাস প্রকল্পের ইউনিয়ন মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটি (সিটিসি) এর সাথে সংলাপ সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত সংলাপটি অগ্রগতি সংস্থার আয়োজনে সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি)এর অর্থায়নে এবং উইনরক ইন্টারন্যাশনাল এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়।

উক্ত সংলাপ সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন অত্র ইউনিয়নের মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মজিদ বিশ্বাস।এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিটিসি’র সদস্যবৃন্দ।

সেশনে আশ্বাস প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম, মানব পাচার কি? মানব পাচারের কারণ? মানব পাচারের ফলাফল, ভিডিও প্রদর্শন, অভাবাসন, অভিবাসন প্রক্রিয়া, ইউনিয়ন মানব মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির কাঠামো, কমিটির কর্মপরিধি, ইউনিয়নে মানব পাচারের অবস্থা, মানব পাচার প্রতিরোধে ইউনিয়ন সিটিসি’র ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এসময় অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, সভ্যতা বিবর্জিত জঘন্য অপকর্ম ‘মানব পাচার’ একটি সামাজিক ব্যাধি। কোনো ব্যক্তিকে তার দেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে বিক্রি বা পাচারের উদ্দেশ্যে লুকিয়ে রাখা, আশ্রয় দেয়া, অন্যকোনভাবে সহায়তা করা হলে মানবপাচার হিসাবে গণ্য হয়। আমাদের দেশে পশ্চাৎপদ এলাকার কিছু মানুষের ধারণা, কোনো রকমে একবার বিদেশে পাড়ি জমাতে পারলেই ভাগ্য বদলে যাবে। এ ধরনের অজ্ঞ মানুষই বিশেষভাবে প্রতারণার শিকার হন।সম্প্রতি লিবিয়ায় নিহত হওয়া ২৬ জন বাংলাদেশী মানব পাচারকারী চক্রের কাছ থেকে অপহৃত হওয়ার পর অপহরণকারীদের হাতে খুন হয়েছেন বলে জানায় লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। কোনভাবেই আমরা যেন এসব মানবপাচারকারীদের কবলে না পড়ি সে দিকে সবসময় সচেতন থাকতে হবে।

এ সময় বক্তারা আরও বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। নিজেকে এবং অন্যদেরকে পাচারের হাত থেকে রক্ষা করুন, নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তা করুন। আপনার অধিকারগুলো জানুন এবং সব সময় সেগুলো আদায় করার চেষ্টা করুন। পছন্দের দেশ বা চাকরিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে ঝুঁকিগুলো যাচাই করুন। আপনার ভবিষ্যৎ আপনি নিজেই স্থির করুন এবং জেনে ও বুঝে আপনার সিদ্ধান্ত নিন। নিবন্ধিত শ্রম অভিবাসী উপায়গুলো জেনে নিন। যেসব সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা পাচার প্রতিরোধে কাজ করে তাদের সঠিক তথ্য দেয়া ও সহায়তা করা কর্তব্য। দেশের বাইরে যাওয়ার পূর্বে এটা অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে যেসব ব্যক্তি যোগাযোগ করছে এবং দিকনির্দেশনা দিচ্ছে তারা নিয়োগদাতার বৈধ এবং আইনগত স্বীকৃত প্রতিনিধি কিনা।

অন্যদিকে এ অবক্ষয় প্রতিরোধে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রের পরিচয় জানা এবং মেয়ের অভিভাবকের ছেলের পারিবারিক অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়া প্রয়োজন। পাচারের পরিণতি সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং পরিবারের সবাইকে সচেতন করা কর্তব্য। কাজের লোক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে ছবি তুলে রাখা এবং প্রাক-পরিচয় যাচাই করে নেয়া আবশ্যক। বাড়ির শিশুকে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর মুখস্থ করানো, অপরিচিত লোকের দেয়া কোনো খাবার বা জিনিস যাতে গ্রহণ না করে সে বিষয়ে পরিবার থেকেই শিশুকে সচেতন করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এ বিষয়ে তথ্যকেন্দ্র পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে পাচার, শোষণ, অবহেলা, নির্যাতন বা অন্য যে কোনো নেতিবাচক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি মানব পাচার রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

উক্ত সংলাপ সেশনটি পরিচালনা করেন অত্র প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী অসিত ব্যানার্জী।সেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন অত্র প্রকল্পের কাউন্সেলর সিরাজুম মনিরা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)