বালিশকাণ্ডের হোতারা ফেরত দিলেন ৩৬ কোটি টাকা

পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুই ঠিকাদার দুর্নীতির দায় থেকে রক্ষা পেতে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়েছেন। তারা এরইমধ্যে সরকারি তহবিলে ফেরত দিয়েছেন ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এর আগে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের চার প্রকল্পে অবিশ্বাস্য মূল্যে বালিশ (বালিশকাণ্ড) ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনাকাটায় ৩১ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চারটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জানা গেছে, ওই বালিশকাণ্ডে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কন্সট্রাকশনের মালিক আসিফ হোসেন ও সাজিন কন্সট্রাকশনের মালিক মো. শাহাদত হোসেন মনগড়া ও ভুয়া বিল তৈরি করেন। পরে এর মাধ্যমে চার প্রকল্প থেকে ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদক। তাদের বিল থেকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ১৪ শতাংশ অর্থ কর্তন করে ওই পরিমাণ টাকা দেয়া হয়েছিল।

পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দেশের এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ প্রকল্পের অধীনেই ছোট ছোট অনেক প্রকল্প আছে। যেমন আবাসিক ভবন নির্মাণ। ওই বাসভবনে ফার্নিচারসহ বালিশ কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী কেনায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ওই দুই ঠিকাদারসহ সংশ্নিষ্ট ৯ জন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। একেকটি বালিশ কেনায় ৬ হাজার ৭১৭ টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। বালিশের পেছনে অস্বাভাবিক অর্থ খরচের এ ঘটনা এখন ‘বালিশকাণ্ড’ হিসেবে পরিচিত।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অন্যান্য প্রকল্পের কাজও ওই দুই ঠিকাদার করছেন। সম্প্রতি ওইসব কাজের বিল প্রস্তুত হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কমিটি ওই সব বিল থেকে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৮ হাজার ৬৭৫ টাকা কর্তন করে আত্মসাৎ করা টাকা সমন্বয় করেছে।

দুই ঠিকাদারের ভুয়া বিল থেকে ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ১৪ শতাংশ হারে কর্তন করে ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা দেয়া হয়েছিল। পরে তাদের অন্য কাজের বিল থেকে আত্মসাৎ করা টাকা সমন্বয় করার সময় ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ১৪ শতাংশসহ মোট ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৮ হাজার ৬৭৫ টাকা সরকারি তহবিলে জমা করা হয়।

দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদাররা টাকা ফেরত দিলেও তারা ক্ষমা পাবে না। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখন চার্জশিট দেয়া হবে। এর পর পুরো বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে যাবে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবাসন প্রকল্পের আসবাব কেনাসহ লাগামহীন অর্থ ব্যয়ের অভিযোগে অনুসন্ধান করে দুর্নীতির প্রমাণ পায় দুদক। এরপর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দুদক উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন ও উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে ওই দুই ঠিকাদার, সংশ্নিষ্ট ১১ জন প্রকৌশলীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেন।

চার মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ প্রকৌশলী হলেন- পাবনা গণপূর্ত বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুদুল আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবীর, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মোস্তফা কামাল, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, এস্টিমেটর ও উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) সুমন কুমার নন্দী, সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. তাহাজ্জুদ হোসেন।

এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতেই লাগামহীন অর্থ ব্যয়ের অভিযোগ উঠলে এক পর্যায়ে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। চার মামলার প্রতিটিতে তাকে আসামি করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)