সাতক্ষীরা মেডিকেলে জরুরী বিভাগ চালুর দাবিতে ইন্টার্নী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
২০১১ সাল থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যাত্রা শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হয়নি হাসপাতালের জরুরী বিভাগ। বিগত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে জরুরী বিভাগ এবং ৫০০ শয্যার চিকিৎসা সেবা চালুর দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোন ফলাফল না আসায় ফের কর্মবিরতি পালন করেছে হাসপাতালের ইন্টার্নী চিকিৎসকগণ। বুধবার (১৪’ই অক্টোবর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ চালুকরতে কৃতপক্ষের নয়ছয় করার জন্য অনবরত কর্মবিরতি কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন ইন্টার্নী চিকিৎসাগণ। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবারও (১৫’ই অক্টোবর) কর্মবিরতি কর্মসূচি পালিত করেছে তারা।
এসময় ইন্টার্নী চিকিৎসকগণ বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ এবং রক্তদান কর্মসূচী পালন করেও এই দাবি পূর্নতা লাভ করেনি। ২০১১ সাল থেকে অদ্যবর্তী দীর্ঘ নয়বছর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হয়েছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ চালু হয়নি। বিভিন্ন সময় ইন্টার্নী চিকিৎসকসহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও তখন হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়কসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের জরুরী বিভাগ চালু এবং পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল সাতক্ষীরাবাসীকে উপহার দিতে চাইলেও তা শুধু আশ্বাসবাণীতে থেকে যায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইন্টার্নী চিকিৎসকরা ঘেরাও কর্মসূচী পালন করেন এবং কর্মবিরতিতে যান। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর এক জরুরী সভায় কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন আগামী ১১ অক্টোবর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ চালু করা হবে। তবে
এখনও বাস্তবে রূপ দিতে পারেনি কেউ। এখানে গাইনী বিভাগ ও শিশু বিভাগ সচল নেই, দুটি বিভাগই একটি হাসপাতালের জন্য খুবই জরুরী। নেই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ। তাছাড়া পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় অধিকাংশ ডাক্তারের পদ শূন্য পড়ে আছে। বিগত বহুবছর ধরে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে জরুরী বিভাগ এবং ৫০০ শয্যার চিকিৎসা সেবা চালুর দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস এবং ভয়ভীতিতে এসব আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। তবে এবার কৃতপক্ষের আশ্বাস ও ভয়ভীতি কোন কাজে আসবেনা জানিয়ে ইন্টার্নী চিকিৎসকরা জানান, যতোদিন তাদের দাবি দাওয়া পূরণ না হবে ততোদিন কর্মবিরতিসহ কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন তারা।
ইস্টার্নী চিকিৎসক ডাঃ তৃণা বলেন, জরুরী বিভাগ চালু না হওয়ায় সাতক্ষীরার ২২ লাখ মানুষ যেমন চিকিৎসা সেবা থেকে বিঘিœত হচ্ছেন তেমনি শিক্ষার্থীরা তাদের হাতেকলমে শিক্ষা থেকেও বিঘ্নিত হচ্ছেন। পেশাগত জীবনে এই ব না তাদের জন্য ক্ষতির কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় ইচিপ সভাপতি ডা. রফিকুল মেহেদি ও সাধারণ সম্পাদক ডা. নয়ন হালদার জানান, বিগত ৬ মাস ধরে আমরা শুধু করোনাতে ডিউটি করেছি। জেলা কমিটির সিদ্ধান্তে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড করা হয়েছিল করোনার শুরুতে৷২০১৫ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে এখনো পর্যন্ত কখনোই জরুরী বিভাগ চালু হয় নি৷ ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত হওয়া এ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হাতেগোনা মাত্র। গাইনীতে সপ্তাহে একদিন ওটি, আর সারা সপ্তাহ দু তিন ঘন্টা আউটডোর – এভাবেই ইন্টার্নশীপ শেষ। মেডিসিনে শুধু ডায়াগনোসড কেসের ফলোআপ করা ছাড়া আমরা ইন্টার্নরা কিছুই শিখতে পারিনি।
অনেক বড় বড় সার্জারী হলেও ইন্টার্ন শেষে কাজে লাগবে এমন কোন সার্জারী এখানে হয় না। এ মেডিকেলটি সার্জনদের প্র্যাকটিস ফিল্ডে পরিণত হয়েছে, রোগীরা হয়েছে গিনিপিগ। ইতোমধ্যে এভাবেই ৩টি ব্যাচ বের হয়ে গেছে। আমরাও ৬ মাস অতিবাহিত করে ফেলেছি৷ গত ২৪শে সেপ্টেম্বর থেকে আমরা ইন্টার্নরা কর্মবিরতিতে যাই৷ পরবর্তীতে ২৯শে সেপ্টেম্বর আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে জেলার সিভিল সার্জন, ডিসি, এসপি, অধ্যক্ষ ও তত্ত¡াবধায়কদের উপস্থিতিতে এক সপ্তাহের মধ্যে জরুরী বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে লক্ষ্যে এখানে প্রথমবারের মতন ই.এম.ও পোস্ট তৈরী হয় ও ৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এমনকী জরুরী বিভাগের সাইনবোর্ড টানানোসহ জরুরী বিভাগের ওয়ার্ডগুলো সাজানো হয় ৷
১১ই অক্টোবর জরুরী বিভাগ উদ্বোধনের প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত সেটি আর করা হয়নি। সাতক্ষীরার এক সাংসদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে আমাদের আন্দোলন ভন্ডুল করার প্রচেষ্টা চালানো হয়৷ আমরা নাকি দেশব্যাপী ঘটে যাওয়া রেপ কেসকে লুকানোর জন্য এসব করছি! এসময় তারা আরো বলেন, আজ আমরা ২০ দিন ধরে কর্মবিরতিতে আছি৷ জরুরী বিভাগ চালু না হবার পেছনে জনবল সংকটকে দায়ী করা হচ্ছে৷ জনবল সংকটের পাশাপাশি এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র কাজ করে। যারা কোনদিনও চান না এখানে জরুরী বিভাগ চালু হোক। এখানকার ডাক্তাররা অফিস টাইমে ক্লিনিক করেন। এসময় তারা ক্ষোভের সাথে বলেন,
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-ই দেশের একমাত্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল যেখানে কোন জরুরী বিভাগ নেই৷ এই সিন্ডিকেট যতোদিন আছে ততোদিন পর্যন্ত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরী বিভাগ চালু হবারও কোন সম্ভাবনা নেই। একারনে সিন্ডিকেট মুক্ত মেডিকেল কলেজ গড়তে এবং দ্রুত সময়ের ভিতরে সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজে জরুরী বিভাগ এবং ৫০০ শয্যার চিকিৎসা সেবা চালু করতে উদ্ধর্তন কৃতপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।