শরীরকে রোগমুক্ত রাখবে ছাতু

স্বাস্থ্য ডেস্ক :

গ্রাম বাংলায় অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার ছাতু। চাল কিংবা গম ভেজে গুঁড়া করে বানানো হয় ছাতু। অনেকে আছেন মুড়ি বা গুড় দিয়ে ছাতু মেখে খান। প্রোটিনে ভরপুর এই খাবারে রয়েছে নানাগুণ। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শিশুদের জন্য এটি খুবই উপকারী। এছাড়াও ওজন কমাতে এর জুড়ি মেলা ভার।

অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে বলে বারবার খিদেও লাগে না। ফলে উল্টাপাল্টা খাবার খেয়ে ওজন বাড়ারও ভয় থাকে না। তবে ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটেই এটি আপনাকে খেতে হবে। সকালে শরবতের মতো করে পানির সঙ্গে গুলিয়ে খেয়ে নিন। সারাদিনে আপনার খিদেভাব কম থাকবে।

এছাড়াও ছাতু শরীরের যেসব উপকার করবে-

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ছাতু খেলে শরীরের নানাবিধ উপকার তো হয়ই, ওজন বৃদ্ধি হ্রাস করে। এমনকি প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় আমাদের ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।

ছাতু সহজে হজম হয়
এটি অনেকটা ইউসুফগুলের মতোই হজমশক্তি বাড়ায়। শরীরের দাহ (জ্বালা), অস্থিরতা কমায়। খাবারের রুচি বাড়ে। রক্তের টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণ করে ক্লান্তি দূর হয়,শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বাড়ে।

রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ
রক্তচাপ ও কোলেস্টরেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ছাতুতে উপস্থিত শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে থাকে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীরও ইচ্ছা হলে ছাতু খেতে পারেন।

শরীরকে রোগমুক্ত করে
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে এমন কিছু উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যে তার প্রভাবে রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এই দুটি উপদান ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্যতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একদিকে শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

অন্যদিকে, প্রোটিন শরীরের ভেতরে যে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণ করে। ফলে সার্বিকভাবে শরীর, ত্বক এবং চুলের জেল্লা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, এইসবকটি উপাদানই ছাতুতে প্রচুর মাত্রায় রয়েছে। নিশ্চয় বুঝতে পয়েছেন কেন প্রতিদিন ছাতু খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।

এনার্জির ঘাটতি দূর হয়
ছাতু খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উপকারী উপাদানগুলো রক্তে মিশে যায়। ফলে সঙ্গে সঙ্গে এনার্জির মাত্রা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের ভিতরে ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি পূরণ হওয়ার কারণে সার্বিকভাবে শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা নিয়মিত প্রাতঃরাশে ছাতুর সরবত খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বয়স্কদের জন্য উপকারী পানীয়
বয়স যত বাড়তে থাকে, তত নানাবিধ শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও কিন্তু ছাতু বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ৬০ বছরের পর থেকে যদি নিয়মিত ছাতু খাওয়া যায় তাহলে একাধিক বয়সকালীন রোগ শরীরে বাসা বাঁধার কোনো সুযোগই পায় না। ফলে শেষ বয়সটা বেজায় নিশ্চিন্তেই কাটাতে পারবেন।

পাকস্থলীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় 
প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে ছাতুর সরবত নিয়মিত খেলে কনস্টিপেশনের মতো সমস্যার প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে। এখানেই শেষ নয়। আরও নানা উপকারে লাগে ফাইবার। যেমন ধরুন, প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে পরিমাণ তেল আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তা পাকস্থলী থেকে বের করে দিতে এই উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সুস্থ থাকতে শিশুদের খেতেই হবে
শরীরের যথাযত বৃদ্ধির জন্য যে যে উপাদানগুলোর প্রয়োজন পরে তা সবই উপস্থিত রয়েছে ছাতুতে। তাই তো বাজার চলতি হেলথ ড্রিঙ্কের পরিবর্তে নিয়মিত যদি শিশুদের ছাতু খাওয়ানো যায়, তাহলে দারুন উপকারে লাগে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী 
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে ছাতুতে উপস্থিত শর্করা খুব ধীরে ধীরে রক্তে মিশে থাকে। ফলে এই ধরনের খাবার খেলে হঠাৎ করে শরীরে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। সেই কারণেই তো ডায়াবেটিস রোগীরও ইচ্ছা হলে ছাতু খেতে পারেন।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ছাতুর সরবত খেলে রক্তচাপ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই যারা হাই ব্লাড প্রেসারে ভুগছেন, তারা এই খাবারটি নিয়মিত খেলে উপকার পেতে পারেন।

নারীদের শারীরিক ক্ষমতা বাড়ে  
পিরিয়ডের সময় শরীরে দেখা দেওয়া পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে ছাতুর সরবতের কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। ছাতুতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ এবং ভিটামিন থাকে, যা শরীরের সচলতা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন সকালে একগ্লাস জলে এক টেবিল চামচ ছাতু গুলে খেয়ে নিতে পারেন। আর যদি টেস্টি করে খেতে চান, তাহলে এর সঙ্গে মিলিয়ে নিন এক চা চামচ মধু, সামান্য লেবুর রস।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)