পেছাতে পারে এসএসসি-এইচএসসি
মহামারি করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার আয়োজন করা যায়নি। আর এ পরিস্থিতিতে আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখনো শঙ্কা কাটেনি। দেশের পরিস্থিতিও ঠিক একই। এ পরিস্থিতিতে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি আছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এ ছুটি আরো বাড়তে পারে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। করোনাকালে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান বন্ধ থাকায় পরীক্ষা যথাসময়ে হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠান খোলার পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
সাধারণত দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী জুলাই মাসে আর নির্বাচনী পরীক্ষা অক্টোবরে নেয়া হয়। আর দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী বা অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুলাই-আগস্টে এবং ডিসেম্বরে নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। এরপর নভেম্বরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা এরইমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষাও হয়নি। একাদশ শ্রেণিতে কলেজ পর্যায়ে নেয়া বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট আর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে এসব শিক্ষার্থীকে ‘অটো পাস’ দেয়া হয়েছে।
তবে দেরি হলেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান জিয়াউল কবীর দুলু বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম শেষ করে পরীক্ষা নেয়া উচিত। অন্যথায় শেখা ও জ্ঞান অর্জনে ঘাটতি থেকে গেলে তা পরবর্তী জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে করোনাকালে লেখাপড়ার ঘাটতি নিরূপণ করে ডিসেম্বরের মধ্যে শিক্ষাবর্ষ শেষ করার লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করার প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসি ও এইচএসসির সিলেবাস-শিক্ষাক্রম যৌক্তিক কারণেই কমানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে গোটা পাঠ্যবই শেষ করেই পরীক্ষা নেয়া হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন এবং বাকি অংশ মূল্যায়ন শেষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশেষ ব্যবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে। সেই কারণে সারাদেশ থেকে সিটপ্ল্যান সংগ্রহ করেছে বোর্ডগুলো। সে অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৩ ফুট দূরত্ব রেখে ‘জেড’ সিস্টেমে শিক্ষার্থীদের বসানো হবে। শিক্ষা বোর্ড থেকে নভেম্বরে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অবশ্য আরো তিনটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের অতীত পরীক্ষার (জেএসসি-এসএসসি) ফলের ওপর ভিত্তি করে গ্রেড দেয়া, স্বল্পপরিসরে পরীক্ষা নেয়া, (এই দুটি গ্রহণ না করলে) আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে এ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা এরইমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে না পারলে বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের উন্নীত করার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
আর এসব কারণেই আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সব পাবলিক পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।