সালিশের সিদ্ধান্তে ফকিরের পড়া রুটি খেয়ে মৃত্যুমুখে কলেজ ছাত্র

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় এক কলেজ ছাত্রকে ফকিরের পড়া রুটির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ঢালীকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অসুস্থ অবস্থায় ওই কলেজ ছাত্রকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ বুধবার (২৬ আগস্ট) সকালে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অসুস্থ মাইনুল হাসান (১৮) ওই গ্রামের মাস্টার ফজলুর রহমানের ছেলে। সে কুমিল্লা সরকারি পলিটেকনিকের মেকানিকাল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের ঢালীকান্দি গ্রামের আব্দুর রব ঢালী তার বাড়ির সামনের খালে মাছ ধরার জন্য চায়না জাল পাতেন। পরদিন সকালে জাল তুলতে গেলে দেখেন সেটি চুরি হয়ে গেছে। ২২ আগস্ট (শনিবার) সকালে আব্দুর রব গ্রামের লোকজন নিয়ে সলিশ করেন। সালিশে স্থানীয় মেম্বার লাল মিয়া মাদবর, সাবেক মেম্বার দলিল উদ্দিন ঢালী, মজিবুর রহমান ঢালী, উত্তর নশাসন সিনিয়র মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবুল খায়ের ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ প্রায় আড়াই শতাধিক লোক ছিলেন। সালিশে চোরকে ভয় দেখানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয় যে, তিন দিনের মধ্যে চুরি হওয়া জাল ফেরত না দিলে গ্রামের লোকদের ফকিরের পড়া রুটি খাওয়ানো হবে।

পরে ২৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) সকাল ৮টার দিকে আব্দুর রব ঢালী (৬৫), তার ছেলে হাবিবুর রহমান ঢালী (৩৩), মোশারফ ঢালী (২৮) ও আরিফুর রহমান ঢালী (২০) মিলে গ্রামের সালিশকারকদের না জানিয়ে ফকিরের পড়া আটা দিয়ে রুটি বানিয়ে এলাকার ৬০ জনকে খাওয়ান।

পূর্ব শত্রতার জেরে পরিকল্পনা করে আব্দুর রব ও তার ছেলেরা কলেজছাত্র মাইনুল হাসানকেও জোর করে সেই রুটি খাওয়ান। রুটি খেয়ে মাইনুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

কিন্তু ঢাকায় না নিয়ে আব্দুর রব ঢালী ও তার ছেলেরা মাইনুলকে ফকিরের পরামর্শে সুস্থ করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যান। ফকিরের কথায় মাইনুলের মাথায় ১০১ কলস পানি ঢালেন। এক পর্যায়ে মাইনুল অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসাপাতালে পাঠান। ঘটনার পর থেকে আব্দুর রব ঢালী ও তার ছেলেরা পলাতক রয়েছেন।

মাইনুলের বোন আয়শা আক্তার বলেন, আব্দুর রব ঢালী ও তার ছেলে হাবিবুর রহমান ঢালী, মোশারফ ঢালী ও আরিফুর রহমান ঢালী মিলে আমার ভাইকে পূর্ব পরিকল্পনা করে রুটির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যা করতে চেয়েছে। আমার ভাই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমার ভাইয়ের এ অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রব ঢালী বলেন, আমার জাল চুরি হয়েছে। চুরির বিষয় কেউ স্বীকার করে না। তাই ফকিরের পড়া আটা এনে রুটি বানিয়ে গ্রামের লোকদের খাইয়েছি। রুটি খেয়ে মাইনুল অসুস্থ হলো কেন জানি না?

নড়িয়া থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) প্রবীণ কুমার চত্রবর্তী মুঠোফোনে বলেন, জাল চুরির ঘটনায় আব্দুর রব ঢালী গ্রামের লোকদের ফকিরের পড়া রুটি খাওয়ায়। সেই রুটি খেয়ে এক কলেজ ছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। এখনও থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)