সাতক্ষীরায় মৎস্যজীবীকে হত্যার ঘটনায় গ্রামবাসীর বিক্ষোভ, শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
সাতক্ষীরার তালা সদরের জেয়ালানলতা গ্রামের মৎস্যজীবী লুৎফর নিকারীকে পিঁটিয়ে হত্যাকারী সরদার মশিয়ার রহমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সাতক্ষীরা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে গ্রামবাসী। বুধবার বেলা একটায় সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।
খুনী সরদার মশিয়ার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ফাঁসির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা এলাকা। সেখান থেকে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াতের কাছে ময়না তদন্তের সঠিক রিপোর্টের দাবিতে গ্রামবাসীর পক্ষে স্মারকলিপি তুলে আবু হায়াত নিকারী।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রুহুল আমিন নিকারী, আবু হায়াত নিকারী, সালেহা বেগমসহ আরও অনেকে। তারা বলেন, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার ও সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে লুৎফর নিকারী প্রাণ হারিয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা তালার সাধারণ খেঁটে খাওয়া মানুষকে অতিষ্ট করে তুলেছে। আমরা এই সন্ত্রাসী বাহিনীর বিচার চাই।
খুলনা রোড মোড় থেকে বিক্ষোভ নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হন এসব মানুষরা। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানবন্ধন করে খুনিদের শাস্তির দাবি জানান। এরপর জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামালের মাধ্যমে খুনী বাহিনীর দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি ও দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন গ্রামবাসীর পক্ষে রুহুল আমিন নিকারী।
এ সময় জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল হত্যাকাÐের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাপারে আশ^স্ত করেন। তিনি বলেন, স্মারকলিপিটি দ্রæত সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নিকট পাঠানো হবে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এরপর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রেসক্লাবে হাজির হন গ্রামবাসী।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, হত্যাকাÐের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এক সময়ের দক্ষিণাঞ্চলের ত্রাস পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক প্রধান মৃনাল বাবুর সহচর ও যার পরিচিতি সন্ত্রাসী মৃনালের কোষাধাক্ষ্য হিসেবে তিনিসহ এই গং জোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। হত্যাকাÐটি স্ট্রোকে মারা গেছে বলে রুপ দিতে তৎপর এই চক্র। এই চক্রের কেউই আওয়ামী লীগের লোক নয়। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগের হাইব্রিড হয়ে জনগণকে অতিষ্ট করে তুলেছে। সন্ত্রাসী সরদার মশিয়ার রহমানের ভাই তালা সদরের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেনসহ একত্রে তালা উপজেলা জুড়ে সন্ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করে চলেছে। সরদার জাকিরও পূর্বে জাতীয় পার্টি, তারপর বিএনপি এখন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি পদ পেয়েছেন। নৌকার টিকিটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এই পরিবারের বাবা ও ভাইয়েরা কেউ জামায়াত নেতা, কেউ জাতীয় পার্টি নেতা আবার কেউ আওয়ামী লীগ নেতা সেজে বসে আছেন। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করে চলেছে। ক্ষমতা পেয়ে সাধারণ জনগণের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিন বার নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারের উপরও চলে এই বাহিনীর আক্রমন। তালা সদরের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস.এম নজরুল ইসলামের উপরও ইতিপূর্বে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে সরদার মশিয়ার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। তালার কিসমতঘোনা এলাকার কেষ্ট ঋষিকেও মারপিট করেছে। সরদার জাকির ইতিপূর্বে তালা থানার একজন এসআইকেও মারপিট করে। পুলিশের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় মামলা হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে তালা উপজেলার নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে মাছ ধরার সময় সেলিম নিকারীকে আটক করে মারপিট করে সরদার মশিয়ার , তার সহযোগী তুহিন শেখ ও রনি। সেলিম নিকারীকে বাঁচাতে গেলে বাবা লুৎফর নিকারীকে মারপিট করে তারা। ঘটনাস্থলেই নিহত হন মৎস্যজীবী লুৎফর নিকারী।