ঢাকার যানজট কমাতে তৈরি হচ্ছে ১০ ইউটার্ন ও ২২ ইউলুপ

রাজধানীর যানজট কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসির) উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে ২২টি ইউলুপ ও ১০টি আধুনিক ইউটার্ন। এর ফলে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর যেতে কোন সিগন্যালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের আটকে থাকতে হবে না।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইউলুপ ও ইউটার্নগুলোর কাজ শেষ হলে রাজধানীবাসীর যানজটের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে। করোনা মহামারির কারণে কাজের গতি কিছুটা হ্রাসের পর আবার এগিয়ে চলছে। চলতি বছরেই সম্পন্ন হবে ইউটার্নগুলোর কাজও।

মূলত যানজট নিরসনের পরিকল্পনা থেকে এই ইউলুপ ও ইউটার্নগুলো নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। রাজধানীর জয়দেবপুর চৌরাস্তাসংলগ্ন তেলিপাড়া থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ তৈরির মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

সাবেক সিটি মেয়র আনিসুল হক এই পরিকল্পনার কাজ শুরু করেছিলেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে উত্তর সিটির প্রায় ৪০ ভাগ যানজট কমে যাবে। এ লক্ষ্যে বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কে প্রকৌশলী কামরুল হাসানের উপস্থাপিত একটি ইউলুপ মডেল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। এর কার্যকারিতা যাচাইয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ট্রাফিক), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ (বিআরটিএ) সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, নগর ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নেয়া হয়। পরে হাতিরঝিল সাতরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার সড়কে ২২টি ইউলুপ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

মডেল অনুসারে জয়দেবপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন তেলিপাড়া থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় পর্যন্ত দুই ধরনের ইউলুপ নির্মাণ কাজ চলছে। বড় ও মাঝারি গাড়ির জন্য ‘টাইপ-এ’ এবং ছোট গাড়ির জন্য ‘টাইপ-বি’ ধরনের ইউলুপ ডিজাইন করা হয়েছে। ‘টাইপ-এ’ এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৪৪ ফুট প্রশস্ত এবং ‘টাইপ বি’ এর ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১০৪ ফুট প্রশস্ত ইউলুপ তৈরি করা হবে। একটি ইউলুপ থেকে অপর ইউলুপের দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, ২২টি ইউলুপ করতে প্রায় ৩৮ বিঘা জমি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা জমি রয়েছে।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ জমিগুলো খালিই পড়ে ছিল। এসব জমি অধিগ্রহণের দরকার হয়নি। সংশ্লিষ্ট তিন দফতর এগুলো সিটি কর্পোরেশনকে ব্যবহার করতে দিচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এই ইউটার্ন ও ইউলুপগুলো বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ি চলতে এক মুহূর্তও থামতে হবে না। সিগন্যালে আটকে থাকতে হবে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা। লাগবে না সিগন্যাল বাতিও।

তিনি আরো বলেন, এ পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল বা ইন্টারসেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে ক্রসিংয়ের কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ ধরনের ইউটার্ন স্থাপন করতে হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কে আর সিগন্যাল পড়বে না। আমি গত ১১ তারিখে ইউটার্নগুলোর কাজ পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ১০টি ইউটার্নের কাজ সম্পন্ন হবে। আর করোনা মহামারির কারণে ইউলুপের কাজ গতি হারিয়েছিলো। আশা করি দ্রুতই এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবো।

আতিকুল ইসলাম বলেন, এই কাজগুলোর পরিকল্পনা ২০১৬ সালে নেয়া হয়েছিল। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে কাজটি থমকে গিয়েছিল। আমি নয় মাসের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পরে আমার একটা কমিটমেন্ট ছিল যে, আনিসুল হকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। তার স্বপ্নগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম ছিল।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)