দুর্নীতি করায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ১২ বছর জেল
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত অভিযোগে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১২ বছর কারাদন্ড ও ২১০ মিলিয়ন রিংগিত জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল নাজিবের বিরুদ্ধে আনা সাত অভিযোগের সব প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দেয়। খবর মালয় মেইলের। অভিযোগের সব বিষয় নিরঙ্কুশভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এই দন্ড দেওয়া হয়েছে- রায় ঘোষণার সময় বলেন কুয়ালালামপুর হাই কোর্টের বিচারক মোহাম্মদ নাজলামন মোহাম্মদ গাজালি। এ মামলায় বিশ্বাস ভঙ্গ, অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাত ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে। দুর্নীতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি মামলার শুনানিতে নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেছিলেন। এদিকে রায় ঘোষণার পর নাজিব সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিনভর আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন তার সমর্থকরা। মিটিং ও প্রতিবাদ মিছিল করতে দেখা গেছে তাদের। নাজিব রাজাক এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পর আদালত সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দেয়। আস্থা লঙ্ঘন, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ সাতটি মামলার মোকাবিলা করতে হয়েছে নাজিবকে। সাবেক ওয়ানএমডিবির ইউনিট এসআরসি থেকে ১ কোটি ডলার অবৈধভাবে নেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ধরপাকড় অভিযানে দেশটির চেষ্টার প্রথম পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে এই মামলাকে। যাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন নাজিব। ওয়ানএমডিবি থেকে সাড়ে ৪ কোটি ডলার চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কৌঁসুলিদের দাবি, তহবিল থেকে ১ কোটির বেশি ডলার তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে নেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণাকে সামনে রেখে শত শত সমর্থক এসে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আদালতে এলে সমর্থকরা তার ‘দীর্ঘ জীবন’ কামনা করে স্লোগান দেন। ফেস মাস্ক পরা নাজিব আদালতে ঢোকার সময় দলের শীর্ষ নেতারা তার চারপাশে ছিলেন। নাজিবের আইনজীবীরা বলেন, মালয়েশীয় অর্থদাতা জো লো ও ওয়ানএমডিবির অন্যান্য কর্মকর্তারা নাজিবকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন। তাকে বলা হয়েছিল, তার অ্যাকাউন্টে যে তহবিল জমা করা হয়েছে, তা সৌদি রাজপরিবার দান করেছে। এটা যে এসআরসি থেকে তছরুপ করা, তা তাকে বলা হয়নি। তবে জো লো এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। নাজিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা পাঁচ বছরের বেশি ঝুলে ছিল। কিন্তু তাকে হারিয়ে মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন করে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের নেতৃত্বে নাজিবের দল আবার ক্ষমতায় আসায় এই মামলাকে দেশটি থেকে দুর্নীতি উৎখাতের বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে।