অমানবিক! এবার বিবস্ত্র মরদেহ ধরিয়ে দিলো আনোয়ার খান মডার্ন
একের পর এক কর্মকাণ্ডে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকা বিল নিয়ে এক করোনা রোগীর মৃত্যুর পর বিবস্ত্র অবস্থায় সেই মরদেহ হস্তান্তর করায় তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন লাশ দাফনকারী স্বেচ্ছাসেবীরা।
জানা যায়, গত ২৫ জুলাই আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোখলেস উদ্দিন নামে এক করোনা আক্রান্ত রোগী। নিয়ম অনুযায়ী মরদেহ দাফনকারী স্বেচ্ছাসেবীদের সংবাদ দেয়া হয়। তারা এসে মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়ে বিস্মিত হন। দেখেন মরদেহে কোনো কাপড় নেই। এই অবস্থায় তারা প্রতিবাদ জানান। হাসপাতাল কর্তৃক্ষকে অনুরোধ করেন একটি চাদর দেয়ার জন্য। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হাসপাতালের লোকজন স্বেচ্ছাসেবদকদের জানান, আমাদের সিস্টেম নেই কাপড় দেয়ার। মরদেহ দাফনকারী স্বেচ্ছাসেবীরা এর প্রতিবাদ করে বলেন, এত টাকা বিল নিলেন অথচ একটা কাপড় দিতে পারছেন না!
পরে হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে একটি পুরনো চাদর দেয়া হয় মরদেহ ঢাকার জন্য।
জানা যায়, মোখলেস উদ্দিন মৃত্যুর আট দিন আগে ভর্তি হন এই হাসপাতালটিতে। আটদিনে তার বিল আসে প্রায় ৫ লাখ টাকা। মৃতের পরিবার মরদেহ গ্রহণের আগে সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে।
মোখলেস উদ্দিনের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভর্তি থাকাকালীন তাকে ভেন্টিলেশন বা আইসিইউতে রাখা হয়নি। আবার প্লাজমা এবং দামী ওষুধও কিনে দেয়া হয় পরিবার থেকে।
রোগী হাসপাতালে ভর্তির পুরো সময়টাই হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ছিলেন। কিন্তু তারপরও তারা প্রায় ৫ লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়! বাধ্য হয়ে পুরো টাকাই পরিশোধ করেন স্বজনরা।
করোনায় মৃতদের দাফনকারী দেশের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারকাজুল ইসলামের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামজা বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের মরদেহ সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা অসহযোগিতা, বিড়ম্বনা ও তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় আমাদেরকে। কিন্তু কোথাও বিবস্ত্র কোনো মরদেহ হাসপাতাল আমাদের কাছে দেয়নি।
তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তিকে বিবস্ত্র অবস্থায় হস্তান্তর করাটা অমানবিক ও লজ্জাজনক। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও তা ঠিক নয়।
হামজা বলেন, করোনাকালীন এই সময়ে আমরা মানুষের অনেক ধরনের রূপ দেখছি।
গত ২৩ জুন এ হাসপাতালে ১১ দিন ভর্তি থেকে সাইফুল ইসলাম নামে এক রোগীর কাছ থেকে বিল ধরা হয় ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টাকা। ২ জুলাই তাকে ডিসচার্জ করা হলেও এই বিপুল পরিমাণ বিল দিতে না পারায় রাত ১০টা পর্যন্ত তাকে আটকে রাখা হয়। অনেক অনুরোধের পর দেড় লাখ টাকা বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হন তিনি।
সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, তাকে শুধু নাপা ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ছাড়া অন্য কিছু দেয়নি হাসপাতাল থেকে। আইসিইউতে থাকতে হয়নি। এমনকি অক্সিজেন দিতে হয়নি, করা হয়নি কোনো অপারেশনও। শুধু রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে আর নাপা ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়েছে হাসপাতালটি। এ ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা ওই রোগীর স্বজনকে ফোন করে সরি বলে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৫ টাকা ফেরত দেয়।
এর আগে গত মাসে করোনা আক্রান্ত মোজাম্মেল হক নামে এক রোগীকে আধা ঘণ্টা অক্সিজেন দিয়ে ৮৬ হাজার টাকা বিল চার্জ করে আনোয়ার খান মডার্ন কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই সময় মোজাম্মেল হক জানিয়েছিলেন, তিনদিন ১০ মিনিট করে তাকে অক্সিজেন দিয়ে এই বিপুল অর্থ দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবার যতদিন তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সেখানকার কোনো চিকিৎসক তাকে একবারের জন্য না দেখলেও কনসালটেশন ফি বাবদ বিল ধরা হয় ৪৯ হাজার টাকা।
এসব প্রসঙ্গে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেলের ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান বলেন, মরদেহ ঢাকতে কাপড় দেয়ার নিয়ম নেই এটা ঠিক না। আমি জানি না তারা এটা কেন করেছে। যদি এমন করে থাকে বা বলে থাকে তাহলে সেটা অন্যায় করেছে।
গত ১ জুন থেকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে তাদের চুক্তি বাতিল করে।